বিরলে কৃষক ভবেশের মৃত্যু, থানায় অভিযোগ দেয়নি পরিবার
দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় কৃষক ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুকে ঘিরে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রতিবেশী চার যুবক ভবেশকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাতটায় ওই চার যুবক মুঠোফোনে পরিবারকে ভবেশের অসুস্থতার কথা জানায়। রাত সোয়া ৯টায় স্থানীয় বাজার থেকে উদ্ধার করে ভবেশকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভবেশের স্ত্রী ও সন্তান এই মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন। বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমে উঠে আসে। এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোচনা শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
ভবেশ চন্দ্র রায় (৫৫) বিরল উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের মৃত তারক চন্দ্রের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক ও বিরল পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে এ ঘটনায় নিহতের পরিবার এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের করেনি।
ভবেশের বাড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ী হাট এলাকায় স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যক্তি জীবনে ভবেশ ছিলেন বিনয়ী ও মিশুক প্রকৃতির মানুষ। একসময় জমিজমা অনেক ছিল। বর্তমানে নিঃস্ব প্রায়। দুই সন্তানের বাবা ভবেশ চন্দ্র রায়। বছর পাঁচেক আগে একমাত্র মেয়ে শ্বশুরালয়ে মারা গেছে। একমাত্র ছেলে স্বপন চন্দ্র রায় দিনাজপুর শহরের কালিতলা এলাকায় মেসে থাকেন। বয়সের বড় ব্যবধান থাকলেও স্থানীয় যুবক মো. রতন (৩২) এবং বাসুদেবপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে আখতারুল ইসলাম ওরফে আতিকের (৩৩) সঙ্গে ভবেশের বেশ সখ্যতা ছিল। উভয়ের বাড়িতেও যাতায়াত ছিল।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাসা থেকে মোটরসাইকেলযোগে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে নাড়াবাড়ি হাটে যান। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় নাড়াবাড়ি বাজারে (দুধ হাটি) অহিদুলের দোকানে চা পান করেন ভবেশ, আতিক ও রতনসহ মোট পাঁচজন। পরে পাশের দোকান থেকে পান সিগারেট খান। এর একটু পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ভবেশ। স্থানীয়রা মিলে প্রথমে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিলে চিকিৎসক দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ভবেশকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাজারের পান দোকানদার মতিবুর রহমান জানান, ভবেশ চন্দ্র আমার দোকান থেকে খয়ের, চুন ও কাঁচা সুপারি দিয়ে পান নিয়েছে। পান খাওয়ার একপর্যায়ে ভবেশ পানের দোকানের সামনে একটি দোকান ঘরের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে পড়েন। এসময় তার সাথে থাকা কয়েকজনসহ স্থানীয়রা ধরাধরি করে পাশেই পল্লী চিকিৎসক লিটনের দোকানে নিয়ে যান। পল্লী চিকিৎসক প্রথমে তার প্রেসার মেপে দেখেন প্রেসার লো হয়ে গেছে। পরে পল্লী চিকিৎসক তাকে দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অ্যাম্বুলেন্স এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরে জানতে পারি ভবেশ মারা গেছেন। আমার দোকানে পান খাওয়ার আগে ভবেশকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি।
ভবেশের ছেলে স্বপ্ন চন্দ্র রায় জানান, আমার সুস্থ বাবাকে বাসা থেকে তারা ডেকে নিয়ে গেল। অসুস্থ হয়েছে বলে আমাকে ফোন করে জানালো, আমি হাসপাতালে নিলাম। আমার বাবা মারা গেল। যারা ডেকে নিয়ে গেল তাদের আর খবর নাই। যদি তারা আমার বাবাকে না মেরে ফেলে তাহলে কেন একবার আমাদের বাসায় এলো না বা আমাদের সান্ত্বনা জানালো না। আমার বাবার মৃত্যু অস্বাভাবিক। তবে এটি অসুস্থ হয়ে হয়েছে নাকি আঘাতের মাধ্যমে সেটি এখনও নিশ্চিত নই। বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। পারিবারিকভাবে আলোচনা করে কী করা যায় সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিরল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সবুর বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় নিহতের পরিবার থেকে ফোনে জানানো হয় ঘটনার কথা। আমরা দ্রুত ভবেশের বাড়িতে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করি। তখন তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পরিবার থেকে এখনো কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার মামলা করতে আসেনি, অভিযোগও দেয়নি। ময়নাতদন্ত হয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে বোঝা যাবে মৃত্যুর সঠিক কারণ। যাদের সঙ্গে গিয়েছে তাদের সঙ্গে থাকা অবস্থাতেই সে অসুস্থ হয়েছে। এরপর তারাই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেছে বলে পরিবারকে জানিয়েছে। এরপর গুরুতর অবস্থা হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। পরিবার অভিযোগ তুলেছে, এজন্য আমরা সুরতহাল প্রতিবেদন করেছি, ময়নাতদন্ত করেছি। আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।
ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বিব্রতকর। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে সেই বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে মিডিয়াতে প্রচার করা ঠিক নয়।
সোহাগ গাজী/এমএএস