বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।

জানা গেছে, নির্মাণাধীন পায়রা সেতুতে পদ্মা সেতুর থেকে ৫০ মিটার বড় দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে। নান্দনিক এক্সট্রাডোজ ক্যাবল বক্স গার্ডার নদীর মধ্যে মূল সেতুর ৬৩০ মিটার। এ জন্য ২০০ মিটারের দুটি স্প্যান ও দুপাশে দুটি স্প্যান ১১৫ মিটার নির্মাণ করা হয়েছে।

১ হাজার ৪৭০ মিটার (৪ হাজার ৮২০ ফুট) দৈর্ঘ্যের ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার (৬৪ দশমিক ৮ ফুট) প্রস্থের এক্সট্রা বক্স গার্ডার রয়েছে। সেতুর উভয় দিকে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হবে অ্যাপ্রোচ সড়ক। সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

এ ছাড়া সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু। ফলে নদীতে নৌযান চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে না। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত হবে সেতুটি। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

পটুয়াখালী-বরিশাল রুটে চলাচলকারী জাহিদ পরিবহনের চালক মো. আব্বাস বলেন, সেতু না থাকায় যানজটের কারণে ঘাটে এসে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। সেতু চালু হলে এই সমস্যা থাকবে না। আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে বরিশাল যাত্রীদের পৌঁছে দিতে পারব।

পটুয়াখালী থেকে বরিশাল যাচ্ছেন আয়শা আক্তার নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, পায়রা সেতুটি আরও এক বছর আগে উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। তখন যদি চালু হতো তাহলে আজ আমাদের কাঁদা পাড়িয়ে ফেরিতে উঠতে হতো না।  সেতুটি চালু হলে আমরা অনেক উপকৃত হবো। 

জাহিদ পরিবহনে কুয়াকাটা থেকে বরিশাল যাচ্ছেন মো. সজিব। লেবুখালী ফেরিঘাটে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা অনেক ভোগান্তিতে পড়েছি। এখন ফেরিঘাটে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। একে অসহ্য গরম অন্যদিকে কাঁদা। সবদিক দিয়ে ভোগান্তি চরমে। সেতু চালু হলে আমাদের আর কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, ইতোমধ্যে পায়রা সেতুর ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জুলাই মাসে পায়রা সেতুর সকল কাজ শেষ হচ্ছে। কাজ শেষে উদ্বোধন করা হবে। শতবাধা বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদার, কনসালটেন্টসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সেতুর নির্মাণ কাজে নিয়োজিত আছেন। 

ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ব্রিজের কাজ অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা। তবে ঠিকাদারের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি জুলাই মাসে সকল কাজ শেষ করতে। বর্তমানে সেতুর  ফিনিশিং কাজ চলছে। টোলপ্লাজার ইকুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আসবে এ সকল বাধ্যবাধগতা রয়েছে। তাই জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে কাজ। 

গুণগত মান সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গুণগতমানের দিক থেকে জিরো ট্রলারেন্স। গুণগতমান রক্ষার্থে কনসালটেন্ট ও ঠিকাদারসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা সজাগ রয়েছে। 

বর্ষা মৌসুম সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি, বর্ষা মৌসুমে এটি একটি চ্যালেঞ্জ। এরপরও জুলাইয়ে সকল কাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু) প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, ইতোমধ্যে মেইন ব্রিজ কানেক্টেড হয়েছে। ব্রিজের মেইন্টেনেন্সের কাজ শেষ হয়েছে। রাস্তা মেইন্টেনেন্সের কাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। 

বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তাপস কুমার পাল বলেন, এটি একটি আইকনিক ব্রিজ হবে। সাধারণ ব্রিজের চেয়ে লেবুখালী সেতু অনেক ভিন্নতর। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে সুন্দর সেতু পায়রা সেতু। এটি নতুন মাত্র যোগ করবে।

মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এসপি