ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তুষ্টির মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের জন্য সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার। একই দাবি তুষ্টির সহপাঠীসহ এলাকাবাসীরও। তারা সকলেই চান মেধাবী এই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর মূল কারণ অতিদ্রুত উদঘাটন করে তা সবাইকে জানানো হোক।

সোমবার (৭ জুন) দুপুরে তুষ্টির গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সুখারী ইউনিয়নের নীলকণ্ঠপুর গ্রামে গিয়ে তার পরিবারের লোকজন, সহপাঠী ও এলাকাবাসী এ দাবি জানান।

এর আগে সকাল ৯টায় নীলকণ্ঠপুর তহসিলের মাঠে তুষ্টির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে এবং শেষবারের মতো তুষ্টিকে এক নজর দেখতে তহসিলের মাঠে মানুষের ঢল নামে। পরে জানাজা শেষে গ্রামের পারিবারিক কবর স্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। 

তুষ্টির বাবা আলতাফ উদ্দিন বলেন, তুষ্টি ছিল আমার একমাত্র মেয়ে। খুব আদরের ছিল সে। তুষ্টি আমার গর্ব ছিল। এলাকাবাসীর গর্ব ছিল। হঠাৎ করে সে ঢাকার বাসায় বাথরুমে মারা গেল। কিন্তু তার মৃত্যুর আসল কারণ কী তা আমরা এখনো জানতে পারছি না। আমি চাই দ্রুত আমার মেয়ের মৃত্যুর মূল কারণ খোঁজে বের করা হোক। 

তার মা হেনা আক্তার বলেন, সবাই সম্পদ গড়ে তোলে। কিন্তু আমরা তা না করে আমার মেয়েকে বই কিনে দিতাম। তুষ্টিকেই আমরা সম্পদ ভেবে পড়াচ্ছিলাম। কিন্তু আমরা ফসল ফলাতে পারলেও ফসল ঘরে তোলা আর হলো না। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। 

তিনি আরও বলেন, আমার সোনার টুকরো মেয়েটা স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে বলে আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। তার মৃত্যুর কারণটা জানা এখন আমাদের জন্য জরুরি।

তুষ্টির চাচা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তুষ্টির কিছুটা শ্বাসকষ্ট ছিল। তা আমরা জানতাম। কিন্তু সেটা মরে যাওয়ার মতো না। সামান্য শ্বাসকষ্টের জন্য বাথরুমে গিয়ে তার মরে যাওয়ার কথা না। এটা আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।

তার আরেক চাচা প্রভাষক ইমাম হোসেন মেহেদী বলেন, তুষ্টির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আমরা এখনো জানতে পারিনি। কারণ উদঘাটনের জন্যই তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে তুষ্টির মৃত্যুর মূল কারণ খুঁজে বের করে আমাদের জানাবে। তবেই আমাদের অন্তর কিছুটা শান্তি পাবে।

তুষ্টির সহপাঠী রাজু বলেন, তুষ্টি ছিল আমাদের সবচেয়ে ভালো একজন বন্ধু। তার মৃত্যুটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। যদি তার স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়ে থাকে তাহলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করছি।

উল্লেখ্য, করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ইসরাত জাহান তুষ্টি অন্য কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে ঢাকার আজিমপুর এলাকার সরকারি কোয়ার্টারের একটি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে আসছিল। 

শনিবার (৫ জুন) মধ্যরাতে তার এক রুমমেট তুষ্টিকে ওই বাসার বাথরুমে পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে রোববার সকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাথরুম থেকে শিক্ষার্থী তুষ্টির মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে মৃতদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জিয়াউর রহমান/এমএসআর