নাটোরে সংক্রমণের হার ৬৭ শতাংশ হওয়ায় নাটোর ও সিংড়া পৌর এলাকায় সাত দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় ওষুধ ও জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। বুধবার (০৯ জুন) থেকে শুরু হওয়া সাত দিনের কঠোর লকডাউন চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত।

মঙ্গলবার (০৮ জুন) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ।

এর আগে (০৭ জুন) গভীর রাতে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজের সভাপতিত্বে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির ভাচ্যুয়ালি এক জরুরি সভা হয়। সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, নাটোরের তিন সংসদ সদস্য, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জনসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যুক্ত হন। সভার শুরুতে সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি নাটোরে সর্বাত্মক লকডাউনের সুপারিশ করেন।

পরে সভায় অংশগ্রহণকারী অন্যদের কাছে লকডাউনের ব্যাপারে মতামত চেয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। সেখানে অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী সর্বাত্মক লকডাউনের পক্ষে মত দেন। আলোচনা শেষে রাত সোয়া ১টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, বুধবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী সাত দিন নাটোর সদর ও সিংড়া পৌরসভা এলাকায় সর্বাত্মক লকডাউন থাকবে। লকডাউনের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।

এ সময় প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, নাটোর ও সিংড়া শহরে করোনা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শুধু মানুষের জীবিকার দিকে তাকালে হবে না, জীবনের দিকেও খেয়াল করতে হবে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। সবার মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। কর্মহীন মানুষদের জন্য খাদ্যসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ করবে স্বেচ্ছাসেবকরা। জরুরি পণ্য সরবরাহ কাজে যাতে কোনো রকম সমস্যা সৃষ্টি না হয়, প্রশাসনকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। লকডাউনের কার্যকারিতার জন্য প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এ সিদ্ধান্ত মানতে হবে এবং সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জানান, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নাটোর জেলায় সংক্রমণের হার ছিল ৬২ শতাংশ। তার আগে ছিল ৬৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে নাটোরে করোনা সংক্রমণের হার ৫০ থেকে ৬০ ভাগে ওঠানামা করছে। এর মধ্যে এই দুই পৌর এলাকায় আক্রান্তের হার সর্বাধিক। এতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার মধ্যরাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ভাচ্যুয়ালি এক জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে নাটোর ও সিংড়া পৌরসভায় ১৫ জুন পর্যন্ত সাত দিনের ‘লকডাউনে’র সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যেখানে শনাক্তের হার ৬৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। তার আগের দিন এই হার ছিল ৫১ শতাংশ। 

নাটোর জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৯৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫০১ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। সোমবার বিকেল পর্যন্ত আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে সদর হাসপাতালে ৩১ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ৩৯ জন এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৩৪৫ জন।

তাপস কুমার/এসপি