মেহেরপুরের গাংনীর গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া ভৈরব নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। নদীর ওপর সেতু না থাকায় বিভক্তি করে রেখেছে মেহেরপুর পূর্বাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত অর্ধশত গ্রামের মানুষকে। বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা সাঁকো স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত করতে যেমন সমস্যা, তেমনি নদীর ওপারে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় স্থানীয় কৃষকদের।

স্থানীয়দের দাবি, গাড়াবাড়িয়া থেকে হিতিমপাড়া খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণ তাদের প্রাণের দাবি। আধুনিকতার ছোঁয়ার আশায় বুক বেঁধে আছেন দুপারের কয়েক হাজার মানুষ।

মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলসহ গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদী। বিভিন্ন সরকারের আমলে বিবিন্ন সময় জনদুর্ভোগ লাঘবে বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণ করা হলেও প্রাচীনকাল থেকেই সমস্যাজর্জরিত এ পারের গাড়াবাড়িয়া এবং ওপারের হিতিমপাড়া ঘাটে সেতু নির্মাণ হয়নি।

এলাকাবাসী জানান, গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া ভৈরব নদীর ওপর দিয়ে নৌকা ও বাঁশের সাঁকোই পারাপার হতে হয় অন্তত ২০ গ্রামের মানুষকে। হিতিমপাড়া, ষোলমারি, শুভরাজপুর, কুতুবপুর, রামদাসপুরসহ অন্তত ১০ গ্রামের মানুষকে প্রতিনিয়িত মেহেরপুর জেলা শহর ও গাংনী উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়।

এ ছাড়া এপারের গাড়াবাড়িয়া, কালিগাংনী, ধলা, নওপাড়া, ভিটাড়াপাড়া, কুরবাড়িয়া এলাকার মানুষের নদী ওপারে কৃষিজমি থাকায় আবাদ করতে যেতে হয়। কৃষিজমির উৎপাদিত ফসল ঘরে আনতে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। বাঁশের তৈরি সাঁকো কিংবা নৌকায় বহনকৃত কৃষিপণ্যে খরচ হয় দ্বিগুণ। ফলে কম দামে স্থানীয় বা বহিরাগত ফঁড়িয়াদের মাধ্যমে বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা।

রামদাসপুর গ্রামের ইউসুব আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, নদীর ওপারের জমি সবজি আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। অনেক দামি সবজি ফসল উৎপাদন হয় কিন্তু পরিবহনব্যবস্থা না থাকায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

স্কুলপড়ুয়া শিশুদের নিয়ে নৌকা পারাপারে প্রবল স্রোতের মুখোমুখি হতে হয় মাঝিদের। নৌকায় পার হতে ভয়ে বুক দুরু দুরু করে বলে জানায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র পলাশ মাহমুদ।

গাড়াবাড়িয়ার প্রবীণ শিক্ষক জোয়াদ আলী জানান, শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো –আর বর্ষাকালে নৌকা হচ্ছে দুপারের মানুষের ভরসা। ছাত্রছাত্রীরা বর্ষায় স্কুলে আসতে ভয় পায়। সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে শতবার আবেদন করেও লাভ হয়নি। বর্তমানে খেয়াঘাটটি ইজারার মাধ্যমে চলছে। তাই নৌকার মাঝি বা সাঁকো নির্মাণকারীকে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছি। মেহেরপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভুক্তভোগীদের দাবি মেটানো হবে।

মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, গাড়াবাড়িয়া-ভৈরব নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ অতি জরুরি। আমি ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উত্থাপন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তবে সেতু নির্মাণ হবে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে আমি আশ্বস্ত হয়েছি।

এনএ