ভাস্করের ছোঁয়ায় তর্জনী উঠিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙচুর করা ভাস্কর্যটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়ায় দুই মাদরাসা ছাত্রের হাতুড়ির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধুর সেই ভাস্কর্যের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাস্কর্য নির্মাণের প্রধান শিল্পী মাহবুব জামাল শামীম।
কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে গত ১৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি তৈরির মধ্য দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপর ৫ ডিসেম্বর রাতে নির্মাণাধীন ওই ভাস্কর্যের হাত ও মুখে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর করে দুই ছাত্র।
বিজ্ঞাপন
পরে ১৮ ডিসেম্বর বিকেল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্যটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্যটির সংস্কারকাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সংস্কার করতে ১৯ দিন সময় লেগেছে বলে জানান ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিকৃতিসহ বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের প্রধান ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম বলেন, একটি ভাস্কর্য তৈরি করার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা সমান করে সিমেন্ট ও পাথর লাগিয়ে সংস্কার করে ঠিক করা কঠিন। প্রচুর পরিশ্রমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্যটির সংস্কারকাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আবারও আগের মতো বঙ্গবন্ধু মাথা উঁচু করে তর্জনী উঠিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুর্খরা ভাঙচুর করেছিল। আমরা মেরামত করলাম।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) থেকে বেজমেন্টে জাতীয় চার নেতা, বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন ও বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর প্রতিকৃতি বেজমেন্টের দেওয়ালে রিলিফ ভাস্কর্য রুপে তৈরির কাজ শুরু হবে। ১৫ দিনের মধ্যে এই প্রকল্পটির সমস্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে।
মাহবুব জামাল শামীম বলেন, প্রতিটি শিল্পীর এক একটি কাজ জীবনের সাধনা। আমার হাতে গড়া বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে আমি নিজেকে অপমানিত বোধ করেছি। সারাবিশ্বে ভাস্কর্য আছে। শিল্পচর্চার বাধাকে আমরা তোয়াক্কা করি না। বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর সামনে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করলে স্বীয় জাতি, ঐতিহ্য আর গৌরবময় ৭১-এর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি নিজের মাঝে ভাসতে বাধ্য।
ভাস্কর্য নির্মাণের কাজে শিল্পী মাহবুব জামাল শামীমকে সহযোগিতা করছেন সাতক্ষীরার ভাস্কর চন্দ্র শিখর, কুষ্টিয়ার ভাস্কর ডাবলু এবং ৫ জন রাজমিস্ত্রী।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙচুর করা ভাস্কর্যটির সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি।
উল্লেখ্য, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ফেব্রুয়ারিতে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কুষ্টিয়া পৌরসভা। সে অনুযায়ী দরপত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকার এই কাজ পান ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম। মহান বিজয় দিবসে এটি উদ্বোধনের লক্ষ্য ছিল। তার আগেই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
১৩ নভেম্বর শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাস্কর্য ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি বসানোর কাজ। ভাস্কর্যটি স্থাপন কাজের শেষের দিকে ৫ ডিসেম্বর রাতে হাতুড়ি দিয়ে এটি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পরে দুই মাদরাসা ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ভাঙচুর করার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
এমএসআর