দিগন্তজোড়া হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় গত বছরের তুলনায় ১৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। ভালো দামের আশায় সরিষাক্ষেত পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তিস্তাপাড়ের চাষিরা।

নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরের কোলঘেঁষা মেঠোপথ আর চরাঞ্চলের কৃষিতে দোল খাচ্ছে সরিষা। দিগন্তজোড়া হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। সবুজের আগায় ভরা সরিষা ফুলে ঘুরপাক খাচ্ছে মৌমাছি। দেখে মনে হয় পৌষের হিমেল বাতাস আর মিষ্টি রোদে হাসছে কৃষকের স্বপ্ন। সরিষার বাম্পার ফলনে খুশি তাদের মন।

তিস্তার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় এ বছর সরিষার চাষ হয়েছে বেশি। দু’চোখ যতদূর যায় প্রকৃতির সবুজ ফ্রেমে হলুদে ভরে উঠেছে আবাদি জমিগুলো। 

গঙ্গাচড়ায় গত বছরের তুলনায় ১৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে

উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কিসামত হাবু গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, এ বছর ৬৬ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। গত বছরের চেয়ে জমি বেড়েছে। আবাদও ভালো হয়েছে। গত বছর ২২ শতক জমিতে সরিষা চাষ করে যা লাভ হয়েছিল, এবার ফলন ভালো হওয়ায় তার কয়েকগুণ বাড়তে পারে।

মাঘের শীতের ওপর ফসলের ফলন কিছুটা নির্ভর করছে জানিয়ে মর্নেয়া ইউনিয়নের ছোটরুপাই আলমার বাজার গ্রামের জহির উদ্দিন বলেন, বেশি শীত এবং তাপমাত্রা কমলে সরিষার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এবার ফলন দেখে মনে শান্তি লাগছে। ক্ষেতজুড়ে হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। আশা করছি সরিষা বিক্রি করে এবারের বন্যা আর করোনার ক্ষতিটা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারব।

জহির উদ্দিনের মতো এখন সব কৃষকের চোখে ভালো দামে সরিষা বিক্রির আশা। এক মাস পর সরিষা ঘরে তোলার সময় ন্যায্যমূল্য দাম পেলে আগামীতে গঙ্গাচড়া উপজেলায় সরিষার চাষাবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হয়। ন্যায্যমূল্য পেলে আমাদের কৃষকের তৈরি হয়।

সবুজের আগায় ভরা সরিষা ফুলে ঘুরপাক খাচ্ছে মৌমাছি

উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের হাবু এলাকার কৃষক মমিনুর ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমার ৩০ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। এক মাস পরই এ ফসল ঘরে উঠবে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও সরিষার আবাদ করেছি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার গঙ্গাচড়া উপজেলায় সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৫ হেক্টর বেশি।

গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর সরিষা চাষে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার কারণে আবাদ কিছুটা বেড়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা উৎপাদনে খরচ অনেক কম। লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা চাষে  কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে দিন দিন সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

সরিষাক্ষেতের পাশে হালচাষ করছেন কৃষক

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সারোয়ারুল হক বলেন, রবিশস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগেই দানা ও ফুল এসেছে। শুধু গঙ্গাচড়াতে নয়; এবার রংপুর বিভাগে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

জানুয়ারির মধ্যভাগে শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা বেশি দিন স্থায়ী হলে সরিষার ফলনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী।

তিনি বলেন, গত বছরের বন্যা ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় সরিষার আবাদ কম হয়েছিল। এবার আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকায় সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। যদি শৈত্যপ্রবাহের স্থায়িত্ব কমে তাহলে বাম্পার ফলন হবে সরিষার।

এএম