রংপুরের তারাগঞ্জে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের দামোদরপুর শাখার অতিথিশালা থেকে হাফিজা বেগম (৩২) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই গৃহবধূ ব্র্যাকে কর্মরত তার স্বামী নূর আলমকে খুঁজতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করছেন সেখানকার কর্মচারীরা।

বুধবার (৯ জুন) দুপুরে উপজেলার বুড়িরহাট বাজার-সংলগ্ন ব্র্যাকের দামোদরপুর শাখার একটি কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার হয়।

হাফিজা বেগম দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর মেয়ে। তার স্বামী ব্র্যাকের দামোদরপুর শাখায় প্রজেক্ট অফিসার (পিও) পদে কর্মরত।

জানা যায়, ২০১০ সালে দিনাজপুরের বোঁচাগঞ্জ উপজেলার বড় পরমেশ্বরপুর গ্রামের মৃত হাফিজার উদ্দিনের ছেলে নূর আলমের সঙ্গে চিরিরবন্দর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের হাফিজা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের চার বছরের মাথায় ছেলেসন্তান জন্ম দেন হাফিজা। কিন্তু ছয় বছর বয়সে তাদের সন্তান মারা যান। এরপর থেকে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লাগত।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নুর আলম ও তার স্ত্রী হাফিজা খাতুন ছয় মাস থেকে তারাগঞ্জের কুর্শা ইউনিয়নের বসপাড়া গ্রামের জবুর আলীর বাসায় ভাড়া রয়েছেন। প্রায় তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লাগত। গত শুক্রবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে হাফিজা অভিমান করে তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভাড়া বাসায় ফিরে আসেন। বুধবার সকালে স্বামীর খোঁজে ব্র্যাকের দামোদরপুর শাখায় যান হাফিজা। স্বামীকে অফিসে না পেয়ে সেখানকার অতিথিশালায় ঢুকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনার জন্য ব্র্যাকের কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাফিজার স্বামী নুর আলমের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া ও পারিবারিক অশান্তিকে দুষছেন।

এ বিষয়ে নুর আলম বলেন, ঘটনার সময় আমি অফিসে উপস্থিত ছিলাম না। কখন কীভাবে অফিসে এসে হাফিজা আত্মহত্যা করেছে, তা আমার জানা নেই। অফিস স্টাফরাই ভালো বলতে পারবেন।

নিহতের বাবা তৈয়ব আলী অভিযোগ বলেন, বিয়ের পর থেকে নানাভাবে আমার মেয়ে হাফিজাকে নুর আলম নির্যাতন করে আসছে। একটি ছেলেসন্তান জন্মের ছয় বছর পর মারা যায়। তখন থেকে আরও বেশি নির্যাতন শুরু করে নুর আলম। আমার মেয়ের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার দাবি করছি।

ব্র্যাকের দামোদরপুর শাখা ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে হাফিজা অফিসে এসে আমার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে তাদের পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এরপর অফিসের গেস্ট রুমে ঢুকে কখন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তা আমরা কেউ জানি না। গেস্ট রুমের দরজা বন্ধ দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করা হয়। পরে ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ