শুক্রবার (১১ জুন) থেকে রাজশাহী মহানগরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বিকেল ৫টা থেকে কার্যকর হবে এ লকডাউন। শুধু মহানগর এলাকায় এ লকডাউন চলবে আগামী ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দিবাগত রাত ১০টার দিকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশ জারি করেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।

এর আগে রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহীর সার্কিট হাউসে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক বসে। সেখান থেকেই এ ঘোষণা আসে।

এ সময় রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবীর, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা তাতে অংশ নেন। ওই বৈঠকে সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

তাতে উল্লেখ করা হয়েছে— লকডাউন চলাকালে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল, দোকান রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। তবে ওষুধ, কাঁচাবাজার, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন ও সৎকারের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান এর আওতাবহির্ভূত থাকবে।

বিধিনিষেধ চলাকালীন বাস-ট্রেনসহ কোনো প্রকার যানবাহন রাজশাহী নগরীতে প্রবেশ করবে না এবং রাজশাহী নগর থেকে বাইরে যেতে পারবে না। তবে আমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য, খাদ্যসামগ্রীবাহী পরিবহন, রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি সেবাদানকারী পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

জনসমাবেশ হয়, এ ধরনের সামাজিক (বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) আচার-অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের গণজমায়েত বন্ধ থাকবে। সব পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। এই বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঈদের পর থেকেই করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে পড়ায় রাজশাহীতে জোনভিত্তিক লকডাউনের পরামর্শ দিচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আমবাণিজ্যের কারণে কঠোর লকডাউনে না গিয়ে জনসাধারণের চলাচল ও গণজমায়েতে কড়াকড়ি আরোপ করে জেলা প্রশাসন। ৩ জুন থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হলেও সুফল মেলেনি। উল্টো বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ ও প্রাণহানি।

এরপর ৬ জুন বিভাগীয় পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে রাজশাহীতে লকডাউন প্রশ্নে আরও কিছুটা সময় নিয়ে আগের জারি করা বিধিনিষেধ আরেকটু কঠোর করা হয়। ৭ জুন থেকে এই বিধিনিষেধ আরোপ ছিল।

এদিকে প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে বুধবার (৯ জুন) সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ১২ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৯ জন রাজশাহীর বাসিন্দা। অন্য ৩ জনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।

এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৭১ শয্যার রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি ছিলেন ২৯০ জন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৮ জন। রাজশাহীর ১৪২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১১ জন, নওগাঁর ১৫ জন, নাটোরের ১৫ জন, পাবনার ৩ জন, কুষ্টিয়ার ৩ জন ও চুয়াডাঙ্গার ১ জন।

গত ১ জুন ৭ জন, ২ জুন ৭ জন, ৩ জুন ৯ জন, ৪ জুন ১৬ জন, ৫ জুন ৮ জন, ৬ জুন ৬ জন, ৭ জুন ৭ জন, ৮ জুন ৮ জন ও ৯ জুন ৮ জন রামেক হাসপাতালে মারা গেছেন। তাদের অধিকাংশই রাজশাহীর বাসিন্দা।

অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগজুড়ে গত এক দিনে করোনায় বিভাগে মারা গেছেন ৭ জন। তাদের তিনজনই রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮১৫ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। এক দিনে বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৫৩ জনের করোনা ধরা পড়েছে রাজশাহীতে।

গত ৯ জুন ৩৫ জন, ৮ জুন ২৯৯, ৭ জুন ২৭০, ৬ জুন ২২২, ৫ জুন ২৮৮, ৪ জুন ৩৭২, ৩ জুন ৩৭৮, ২ জুন ৪২৭, ১ জুন ৩৮২ এবং ৩১ মে ৩০০ জনের করোনা ধরা পড়েছে রাজশাহীতেই। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/এনএ/এইচকে