আজ ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। গেল বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সফলতার দিন। এদিন দীর্ঘ শাসনামলের ইতি ঘটিয়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে কুমিল্লার মানুষ। দলে দলে মিছিল নিয়ে সমবেত হন নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে। পুরো এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। নগরীর প্রতিটি মিষ্টি দোকান খালি হয়ে পড়ে। স্বৈরাচার বিদায়ের আনন্দে মিষ্টি মুখে মেতে ওঠে মুক্তিকামী মানুষ।

এদিন সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের লাকসামের বাসভবন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, মহানগর আওয়ামী লীগ, কুমিল্লা ক্লাব, টমছমব্রিজ মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স, কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স, দেবিদ্বার থানা, মুরাদনগর, কোতোয়ালি মডেল থানা, নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন, নাঙ্গলকোট থানা, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস, নাঙ্গলকোট পৌর মেয়র আবদুল মালেকের বাসভবন, নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন কালুর বাসভবন, লাকসাম পৌর মেয়রের বাসভবন হামলা ভাঙচুর লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয়। দেবিদ্বারে পুলিশ ও জনতার সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। আগুন দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।

কুমিল্লা শহরে বিকেলে উত্তেজিত জনতা মিছিল নিয়ে প্রথমে হানা দেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। বিক্ষুদ্ধ জনতা ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দৃষ্টিনন্দন এই কার্যালয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালান। লুটপাট করে নেওয়া সবকিছু। ৯ তলা ভবনটি এখন ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

একই সময়ে নগরীর মুন্সেফ বাড়ি এলাকায় অবস্থিত সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বাড়িতেও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যান বিক্ষুব্ধরা। লুটপাট করা হয় প্রতিটি কক্ষে।

আনন্দে উদ্ভাসিত একটি পক্ষ যান কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে। সেখানে পুলিশের তৈরি নৌকা মঞ্চ গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ লাইনসে থাকা চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং পুলিশের অস্ত্র লুটপাট করা হয়। অবশ্য পরে সেসব অস্ত্র থানায় জমা দেওয়া হয়।

সাবেক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের সমন্বয়ক আবু রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোটা আন্দোলনের যে স্ফুলিঙ্গ, সেটি ছড়িয়ে পড়ে মূলত কুমিল্লা থেকেই। ১১ জুলাই কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশ উত্তাল হতে থাকে। কুমিল্লা থেকে যে প্রতিরোধ গড়া হয়েছিল সেই প্রতিরোধের প্রভাব পড়ে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে।

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার দানব বাহার আর তার মেয়ে সূচনার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষেরা হাসিনার পালানোর খবরে রাস্তায় নেমে আসেন। হাসিনার পালানোর খবর পেয়ে তাদের বাড়ি এবং অফিস গুঁড়িয়ে দেন দীর্ঘদিন নিপীড়নের শিকার মানুষেরা। বাহার আর তার মেয়ে কুমিল্লায় একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। পুলিশ একটি দলের হয়ে যে নিপীড়ন চালিয়েছে, মানুষ তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ লাইন্সে তাণ্ডব চালিয়েছে। এর দায় পুলিশেরই ছিল। পুলিশ লাইন্সে দলীয় প্রতীক নৌকা কেন বানাতে হবে!

সাবেক কুমিল্লা জেলার সমন্বয়ক বর্তমান জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়ক সাকিব হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ২ হাজারের ওপর ভাইবোনের প্রাণ নিয়েছে হাসিনা। পৃথিবীর ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন ঘৃণ্য আচরণ কোন স্বৈরশাসক করেননি। কিন্তু হাসিনা তার গদি টিকিয়ে রাখতে সেটিই করেছিলেন। এসব কারণে আমাদের সাথে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন আন্দোলনে। আলহামদুলিল্লাহ আমরা সেই স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করে একটি মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি।

আরিফ আজগর/আরকে