পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে নবজাতক ফিরল মায়ের কোলে
চুয়াডাঙ্গায় আইন না মেনে দত্তক নেওয়া এক নবজাতকে উদ্ধার করেছে সদর থানা পুলিশ। রোববার (১৩ জুন) রাতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে দামুড়হুদা উপজেলার গোপালনগর গ্রাম থেকে উদ্ধার করে নবজাতককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার মায়ের কোলে।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দলকা লক্ষ্মীপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার সুমাইয়া খাতুন ওরফে অনন্যার (২২) প্রসববেদনা শুরু হলে শনিবার (১২ জুন) বিকেলে তাকে ভর্তি করা হয় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কলেজপাড়ায় অবস্থিত উপশম নার্সিং হোমে। রাত ৮টার দিকে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। পরেরদিন সকালে নবজাতককে নিয়ে যায় দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের রিপন-লিপা দম্পত্তি।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা হয় আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই দম্পতি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নবজাতককে কিনে নেয়। এ ঘটনা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের নজরে আসে। রোববার সন্ধ্যার দিকে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের নির্দেশে সদর থানার একটি টিম নবজাতককে উদ্ধার করে।
ওই প্রসূতি নারী বলেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর পরই আমার স্বামী আমাকে রেখে চলে যায়। তার কোনো খোঁজ-খবর নেই। আমি নিজেই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং তাদের আগ্রহ দেখে সন্তানকে দত্তক দিতে রাজি হয়। আমার কাছে থাকার চেয়ে তাদের কাছে থাকলে আমার বাচ্চা অনেক ভালো থাকবে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে রিপন-লিপা দম্পতি জানিয়েছেন, দীর্ঘ ১২ বছর দাম্পত্য জীবনে তাদের কোনো সন্তান হয়নি। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা খবর পান পাশের গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী অন্তঃসত্ত্বা। সন্তানের ভরণপোষণ করার ক্ষমতা তার নেই। পরে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সন্তান দত্তক দিতে রাজি হন। পরে তাকে শহরতলীর একটি ভাড়া বাড়িতে রেখে গর্ভকালীন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এ ব্যাপারে উপশম নার্সিং হোমের স্বত্বাধিকারী ডা. জিন্নাতুল আরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ ঘটনার কিছুই জানতাম না। কিছু দিন ধরে আমি অসুস্থ থাকায় ক্লিনিকে যায়নি। রোববার রাতে ক্লিনিকে প্রশাসনের লোকজন ও সাংবাদিকরা আসায় বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, শনিবার রাতে এক নারী একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। ডাক্তার দেখানোর নাম করে চলে গেছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে। এর বেশি কিছু জানি না।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান জানান, গোপালপুরের রিপন-লিপা দম্পতিকে আইনি প্রক্রিয়ায় সন্তান নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মৌখিকভাবে টাকা-পয়সার মাধ্যমে সন্তান দত্তক নেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আসলে তারা যে কাজটি করেছে সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। শিশুর যে অধিকার সেটা রক্ষা হয়নি। শিশুটিকে যদি নিতে হয় তাহলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে।
আফজালুল হক/এসপি