গত বছরের চেয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ ভুট্টা বেশি উৎপাদিত হয়েছে

বগুড়ায় এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ায় ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন চাষিরা। জেলার শেরপুর, ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয়ে থাকে। তবে শেরপুর ও ধুনটে ব্যাপক আকারে ভুট্টার চাষ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করেছে।

এ ছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর তীরের অনেক চরেই ভুট্টার ফলন হয়েছে ভালো। আবাদে খরচ কম হওয়ায় বেশির ভাগ চাষি এখন ভুট্টা উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার বিঘাপ্রতি গতবারের তুলনায় ৮ থেকে ১০ মণ বেশি ভুট্টা ঘরে তুলছেন চাষিরা। তাই কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে আমিষ-জাতীয় এ শষ্যের প্রতি।

ধান ও গমের চেয়ে ভুট্টার পুষ্টিমাণ বেশি। প্রায় ১১ শতাংশ আমিষ-জাতীয় উপাদান রয়েছে ভুট্টায়। আমিষে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে। এ ছাড়া হলদে রঙের ভুট্টাদানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন ‘এ’ থাকে।

ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টাগাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছ। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মেটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টন ভুট্টাদানা প্রয়োজন। এ জন্য বাংলাদেশে ভুট্টার জমি দ্রুত বাড়ছে।

সরেজমিনে বগুড়ার শেরপুরের রনবীরবালা, খানপুর ইউনিয়ন, ধুনট উপজেলার জালশুকা, গোসাইবাড়ি, রুদ্রবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা চলছে। জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ ও চাতালে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। অনেক বাড়িতে দেখা যায় নারীরা ভুট্টা শুকানোর কাজে ব্যস্ত। পুরুষরা জমি থেকে ভুট্টা তুলে আনছেন আর নারীরা তা প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর কোনো কোনো বাড়ির সামনে রোদে শুকাচ্ছেন ভুট্টার ডগা ও ডালপালাগুলো। এসব জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট কারখানাতেও।

বগুড়ার শেরপুর রনবীরবালা গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, এ বছর সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। গত বছর প্রতি বিঘায় গড়ে ৩০ থেকে ৩২ মণ ফলন হয়েছিল। এবার হয়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ মণ। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।

ভুট্টাচাষি গোফফার আলী জানান, এ বছর ফলন ভালো হয়েছে সেই সঙ্গে ভুট্টা চাষে কম হয়েছে। কাঁচা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা আর শুকানো ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে। এমন দাম পাওয়ায় কৃষক অনেক খুশি। তাই অনেক কৃষক ভবিষ্যতে ভুট্টা চাষ করবেন বলেও পরামর্শ নিতে আসছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল চর এলাকার চাষি মতলব আলী জানান, ভুট্টা চাষ করতে কষ্ট কম হয়। খরচও কম। আবার লাভ বেশি। ধানের তুলনায় ভুট্টা চাষে লাভ বেশি বলে মনে করেন তিনি। এবার দুই বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি করেছেন ৫২ হাজার টাকায়। খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ ঘরে তুলেছেন বলেও জানান তিনি।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. দুলাল হোসেন জানান, ভুট্টা চাষে তুলনামূলক খরচ কম হয়। তাই এই মৌসুমে কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এবার ভুট্টা চাষে ফলন ও দাম দুই-ই ভালো হওয়ায় চাষিরা খুব খুশি। ভবিষ্যতে চাষের পরিমাণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুসারে, গত বছর ভুট্টার আবাদ হয়েছিল ৫৭ হাজার বিঘা। চলতি বছর ৬২ হাজার ৬৮৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ হাজার ৬৮৫ বিঘা জমি বেশি। আর গড় ফলন প্রতি বিঘায় ৩২ মণ ধরা হলেও কৃষকেরা পাচ্ছেন প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ মণ, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ বেশি।

পুষ্টিকর এ খাদ্য মানুষের প্রতিদিনের খাবারের জোগান মিটিয়ে ভুট্টার চাহিদা থাকে সারা বছরই, যা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ ও গবাদিপশুসহ বিভিন্ন প্রাণীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশে রবি মৌসুমে মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ) পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

এনএ