স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা বাজারে দাঁড়িয়ে পথচারীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন একটি গোলাপের ছড়ি। ফুল পেয়ে পথচারীরা খুশি হচ্ছেন। বিস্তারিত শুনে দিচ্ছেন ১০, ২০ কিংবা ৫০ টাকা। এভাবেই টাকা জোগাড় করে থ্রোমোসাইটোপেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি শিশু লমিয়াকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা।

দয়া কিংবা ভিক্ষা নয়, স্থানীয় যুবকরা শহর গ্রাম পাড়া-মহল্লায় ফুল হাতে ছুটছেন শিশু লামিয়ার চিকিৎসার টাকার সন্ধানে। কারণ, শিশু লামিয়াকে বাঁচাতে দরকার ছয় লাখ টাকা।

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার চিৎলা গ্রামের দিনমজুর সাহাবুদ্দিনের শিশুকন্যা লামিয়া (৫)। ছয় মাস ধরে থ্রোমোসাইটোপেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আফিকুল ইসলামের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছে।

লামিয়ার বাবা একজন স্থানীয় এনজিওর গাড়িচালক। তার রোজগারে সংসার চালিয়ে মেয়ের চিকিৎসা খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য মেয়েকে বাঁচাতে বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

শিশুকন্যা লামিয়ার বাঁচার আকুতি দেখে গ্রামের যুবসমাজের অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ভিক্ষা কিংবা সাহায্য নয়, ফুল বিক্রি করার কাজে বেরিয়ে পড়েছেন গ্রামের নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাসেবীরা। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাশেদুল ইসলাম পল্লব নামের এক সমাজসেবী।

শনিবার (১৯ জুন) বিকেলে মেহেরপুরের গাংনী বাজারে অর্থ জোগাড়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে সংগঠনটি। লামিয়ার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে তারা বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণ করবে বলে জানান রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব।

পথচারী তারেক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি গোলাপের বিনিময়ে যদি একটি শিশুর জীবন বাঁচে, সেটি হবে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। একটি গোলাপের মূল্য কতই না হবে? ১০ কিংবা ২০ টাকা! একটি জীবনের দাম কি তা দিয়ে কেনা যায়?

মেহেরপুর জজ কোর্টের আইনজীবী এ কে এম শফিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুল ভালোবাসার প্রতীকী বিনিময়। পথচারীদের ন্যায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত শিশু লামিয়াকে বাঁচাতে। পথচারীদের একটি ফুলের দামে বাঁচবে একটি শিশুর জীবন। লমিয়াকে বাঁচাতে ফুলের বিনিময়ে যে টাকা জোগাড়ের উদ্যোগ, তা অবশ্যই সফল হবে বলে মনে করেন তিনি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান বলেন, আমি শিশু লামিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করব। এ ছাড়া আমার পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। তবে সমাজের যুবকেরা লামিয়াকে চিকিৎসার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা একটি মানবিক উদ্যোগ। এখানে সবার সহযোগিতা পেলে শিশু লামিয়ার জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।

মেহেপুর জেলা কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসির ফোরামের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিশু লামিয়ার জন্য আমাদের সহযোগিতা থাকবে। বিষয়টি আগে জানা ছিল না। তবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা পাবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানম বলেন, ফুল দিয়ে অর্থ জোগাড় যুবকদের একটি মহতি উদ্যোগ। লামিয়ার পরিবার আমার কাছে এলে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে চাই। তবে সমাজের বিত্তবানরা লামিয়ার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসবে, এ আহ্বান করেন তিনি।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুবসমাজের এই উদ্যোগ একটি মানবিক উদোগ। লামিয়াকে বাঁচানোর উদ্যোগের সঙ্গে আমিও অংশীদার হতে চাই। লামিয়ার পরিবার আমার কাছে এলে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করব।

এনএ