ব্রুকলিনে এক টুকরো বাংলাদেশ, প্রবাসে জামাই-শ্বশুরের সবুজ কৃষির গল্প
হাজার মাইল দূরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ব্যস্ততম এলাকা ব্রুকলিন। যেখানে সারি সারি উঁচু ভবন, গাড়ির গর্জন আর যান্ত্রিক কর্মব্যস্ততায় ভরপুর জীবন। সেই কংক্রিটের শহরের মাঝখানে গড়ে উঠেছে এক টুকরো সবুজ বাংলাদেশ। যা তৈরি হয়েছে নোয়াখালীর দুই প্রবাসী জামাই সোহাগ আলম বাবু ও তার শ্বশুর মঈন চৌধুরীর হাত ধরে।
তারা নিজেদের বাড়ির আঙিনায় তৈরি করেছেন একটি অনন্য কৃষিক্ষেত্র। সেখানে দেশি শাকসবজির পাশাপাশি চাষ হচ্ছে নানা ধরনের বিদেশি ফলও।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সোহাগ আলম বাবু প্রায় ১৭ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তার বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নে। দীর্ঘ প্রবাসজীবনেও কৃষির প্রতি তার ভালোবাসা কমেনি। দুই বছর আগে নিউইয়র্কের ইস্ট নিউইয়র্ক এলাকায় একটি বাড়ি কেনার পর তিনি বাড়ির পেছনের ফাঁকা জায়গাটি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। তার এই উদ্যোগে পাশে ছিলেন শ্বশুর মঈন চৌধুরী, যিনি বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চৌধুরী বাড়ির সন্তান। শুরুটা ছিল স্রেফ শখে কয়েক ধরনের শাকসবজি রোপণের মাধ্যমে। কিন্তু পরিশ্রম, ভালোবাসা আর সঠিক পরিকল্পনার কারণে অল্প সময়েই সেই ছোট আঙিনা পরিণত হয় এক বিস্তৃত সবুজ ক্ষেত্রের মতো।
প্রবাসজীবনে দেশি খাবারের ঘাটতি অনেকেই অনুভব করেন। বাজারে দেশি শাকসবজি পাওয়া গেলেও তা যেমন দুষ্প্রাপ্য, তেমনি দামেও চড়া। তাই সোহাগ ও মঈনের এই আঙিনার চাষাবাদ এখন তাদের পরিবারের পুরো বছরের সবজি চাহিদা পূরণ করছে।
বিজ্ঞাপন
তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশি কচু, পুঁইশাক, বেগুন, ডাঁটা, লাউ, কুমড়া, শসা, ঝিঙা, করলা, ঢেঁড়স, টমেটোসহ প্রায় সব ধরনের সবজি আমরা চাষ করছি। এমনকি কিছু বিদেশি ফলও ফলাতে সক্ষম হয়েছি।
নিউইয়র্কের ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা ব্যবহার করছেন আধুনিক জলসেচ পদ্ধতি, উন্নত অর্গানিক সার এবং টানেল হাউজ সিস্টেম। এর ফলে তুষারপাতের সময়েও কিছু শাকসবজি ও হার্ব চাষ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
শ্বশুর মঈন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা পেশাদার কৃষক নই, কিন্তু কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই পথ চলা শুরু। এখন প্রতিদিন সকালে গাছের কাছে যাওয়া, মাটি ছোঁয়া, ফুল-ফল দেখা এসব আমাদের জীবনের আনন্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের মাটি ও গন্ধের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে জামাই সোহাগ আলম বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশ ছেড়েও আমরা দেশের মাটির টান ভুলিনি। এই সবুজ উদ্যোগ কেবল জীবিকা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর আত্মিক বন্ধনের প্রতীক। কৃষি আমাদের রক্তে মিশে আছে। অনেকেই আমাদের দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন তাদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি কীভাবে শুরু করা যায়, কোন সরঞ্জাম লাগে, কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো হয়। আমরা চাই, এই সবুজ উদ্যোগ আরও বড় হোক।
আরও পড়ুন
প্রবাসী মো. জাহিদ রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামাই-শ্বশুরের এই আঙিনার কৃষি, শস্য আর ফলের ঘ্রাণে যেন এক টুকরো বাংলাদেশকে ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি পাই। বিদেশের মাটিতে এমন সবুজ দেখে মন জুড়িয়ে যায়। এটি শুধু চোখের প্রশান্তি নয়, আত্মার শান্তিও দেয়।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাছরিন আকতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবুজের প্রতি ভালোবাসা থেকে ব্রুকলিনে তারা দেশকে অনুভব করছেন। এটা খুবই গর্বের বিষয়। আমরা তাদের সফলতা কামনা করি। একই সঙ্গে যারা তাদের দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন, তাদেরও সফলতা কামনা করি। আমি বিশ্বাস করি এভাবেই আমাদের মাটি ও কৃষি এগিয়ে যাবে।
হাসিব আল আমিন/এআরবি