সুব্রত চন্দ্রের মৃত্যু হত্যা নয়, দুর্ঘটনা : পুলিশ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্ত্রীকে আনতে গিয়ে সড়কে নিহত সুব্রত চন্দ্র দাসের (৪০) মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি নূর মোহাম্মদকে (৫৭) বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে সুধারাম থানার ধর্মপুর ইউনিয়নের উত্তর ওয়াপদা বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত নূর মোহাম্মদ সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামের মৃত আলী আহম্মদের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর (সোমবার) দুপুর আনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিটে চরজব্বর থানার ৫নং চরজুবলী ইউনিয়নের পশ্চিম চরজুবলী এলাকায় রাজ্জাক সওদাগরের ধানক্ষেতের উত্তরে পাকা সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় সুব্রত চন্দ্র দাসের (৪৭) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত সুব্রত চন্দ্র দাস স্থানীয় চিরু রঞ্জন দাস ও প্রীতি রানী দাসের পুত্র। ঘটনার পরদিন, ১৪ অক্টোবর চরজব্বর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত হিসেবে নূর মোহাম্মদকে শনাক্ত করা হয়। সে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তারে কিছুটা সময় লাগে, তবে অবশেষে পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে, পূর্ব শুল্ল্যুকিয়া এলাকার জসিম ড্রাইভারের বাড়ি থেকে আসামির ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুব্রত চন্দ্র দাস দুই সন্তানের জনক এবং বেকার ছিলেন। তার স্ত্রী রিক্তা রানী দাস চর হাসান ভূঞারহাটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে চাকরি করেন।
আরও পড়ুন
ঘটনার দিন দুপুরে স্ত্রীকে আনতে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে বের হন সুব্রত। পথে হারিছ চৌধুরী বাজারের পশ্চিমে পলোয়ান বাড়ির সামনে পৌঁছালে দুর্ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিজ্ঞাসাবাদে নূর মোহাম্মদ স্বীকার করেছেন, ঘটনার দিন দুপুরে নূর মোহাম্মদ তার ভাগিনা ফয়সালকে (১০) নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে গাছ কাটার শ্রমিকদের খাবার দিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় ভুক্তভোগী সুব্রত চন্দ্র দাসের মোটরসাইকেলের সাথে নূর মোহাম্মদের মোটরসাইকেলের অনিচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা লাগে। হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা দুজনই পড়ে যান। তখন মোটরসাইকেলের বাম্পার ও স্ট্যান্ডের আঘাতে সুব্রতের গলা কেটে যায় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীও পুলিশের কাছে একই বর্ণনা দিয়েছেন।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা রহস্য উদঘাটন করলেও প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত বিষয়টি প্রকাশ করিনি। প্রাথমিক তদন্ত, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় জানা গেছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত কোনো হত্যা নয়, একটি দুর্ঘটনা। গ্রেপ্তার হওয়া আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই-বাছাই না করেই ঘটনাটিকে ‘প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা’ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, যা তদন্তের স্বার্থে বিভ্রান্তিকর এবং অনভিপ্রেত। এ ধরনের অপতথ্য সমাজে ভুল বার্তা দেয় এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আগামীতে গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আমি আশা করি।
হাসিব আল আমিন/এআরবি