সাংবাদিককে ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করলেন অধ্যক্ষ
রংপুরে সাংবাদিকের ফোন নিয়ে ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে রংপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামিমা আখতারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সামনে সাংবাদিকের মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ডিলেট করতে বাধ্য করা হয় বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী দুই গণমাধ্যমকর্মী।
জানা যায়, রংপুর সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সংবাদের তথ্য সংগ্রহে যান অনলাইন গণমাধ্যম ক্যাম্পাস২৪ নিউজের প্রতিবেদক আব্দুল মতিন ও তারিকুল ইসলাম। এসময় অনুষ্ঠান চলাকালীন কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে বহিরাগতদের গাঁজার আসর থেকে ব্লেড দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর রগ কাটার চেষ্টা করা হয়। একই সাথে আহত শিক্ষার্থীকে বহিরাগতরা কয়েক দফায় ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ভিডিওধারণ করায় উপস্থিত দুই সাংবাদিকের ফোন থেকে ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর শামিমা আখতার।
বিজ্ঞাপন
হামলায় আহত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. আব্দুস সুহাস সিয়াম জানান, আমি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আজকে কলেজে নবীনবরণ ছিল। আমি আমার বন্ধুবান্ধব ও জুনিয়রসহ কলেজের পাশে ছবি তোলার জন্য যাচ্ছিলাম। ওই জায়গায় ১০-১২ জন ছেলে ছিল। ওরা আমাকে বলছিল তোমরা এই জায়গা থেকে চলে যাও। আমি যাইতে একটু দেরি করেছি, এ কারণে একজন গায়ে হাত তুলছে। আরেকজন এসে আমার হাতটা কেটে দিছে। তারপরে আমি যখন ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে আধা ঘণ্টা পর ড্রেসিং করতে গিয়েছি, ওরা আমাকে সবাই ধরে মারা শুরু করে। একপর্যায়ে আমাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। ওরা সবাই বহিরাগত ছিল। এদের কাউকেই আমি চিনতে পারিনি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আব্দুল মতিন বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের প্রোগ্রাম কাভার করতে গিয়েছিলাম। শেষের দিকে পরিত্যক্ত ভবনের দিকে কিছু ছাত্র-ছাত্রীর ছোটাছুটি দেখে আমরা সেদিকে যাই। পরিতক্ত ভবন থেকে একজন শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসে তার হাত ব্লেড দিয়ে কাটা হয়েছে। আমরা সেটি ভিডিও নিয়েছি এবং পরবর্তীতে সেই ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় অধ্যক্ষসহ অন্যান্য স্যারেরা চলে আসে। এবং আমাদের কাজে বাধা প্রদান করে। আমাদের ভিডিওটি জোরপূর্বক ফোন থেকে ডিলিট করা হয়। সেখানে অধ্যক্ষসহ অন্যান্য স্যারেরা সবাই উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
রংপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামিমা আখতার বলেন, আমার কলেজে আজকে নবীনবরণ অনুষ্ঠান চলাকালীন কলেজের পরিত্যক্ত ভবনে বহিরাগতরা এসেছিল। তারা ওখানে আড্ডা মারার সময় আমার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝগড়া লাগায় সম্ভবত কোনো ধারালো জিনিস দিয়ে পোচ দিয়ে পালিয়ে গেছে। সবাই ছুটে গিয়ে ওই ছেলেকে ফার্স্টএইড দিয়েছে ও বাইরে পাঠিয়েছে ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করার জন্য। শিক্ষার্থীরা কাউকে না চিনতে পারায় আমি কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারিনি।
অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে প্রবেশ কিংবা সাক্ষাৎকার নেওয়া যাবে না দাবি করে অধ্যক্ষ আরও বলেন, সেসময় সাংবাদিকরা ছাত্রদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করছিল। তারাতো এ কাজের জন্য আসে নাই, এরা তো কলেজের অনুষ্ঠান কাভার করতে এসেছিল, তারা সেটা করুক। শিক্ষাঙ্গন যত ছোটই হোক সেখানে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ছাড়া পুলিশও ঢোকে না অ্যাডমিনের কেউ ঢোকে না। জরুরি অবস্থার সময় সেনাবাহিনীও অনুমতি চেয়েছিল। ক্যাম্পাস যত ছোটই হোক এখানে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ছাড়া পুলিশের কেউ ঢোকেনি, অ্যাডমিনের কেউ ঢোকেনি, সাংবাদিকরা কি এর বাইরে?
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস