কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা জমা করলেই পাবেন পেনশন সুবিধা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেছেন, বাংলাদেশ জনমিতিক লভ্যাংশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ২০৩৩ সালে দেশে বয়সের কারণে নির্ভরশীল জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি গড় আয়ুও বৃদ্ধি পাবে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সম্মানজনক নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম।
রোববার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে সর্বজনীন পেনশন মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুস্থ ও অসহায় জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের ১৪৩টি কর্মসূচি চলমান ছিল। যার মধ্যে থেকে এবারের বাজেটে কিছু কর্মসূচি কমিয়ে ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরপরও যারা উপকারভোগী তাদের জন্য এ অর্থ অপ্রতুল। এসব কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে সরকারের একক ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের শিক্ষকরা খুব সামান্য পেনশন পান। এই অর্থ পেতেও তাদের বেশ বেগ পেতে হয়। বেসরকারি চাকরিজীবীরা বিভিন্ন সময়ে চাকরি হারানোর ভয়ে থাকেন। অন্যদিকে, মাত্র ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারী সরকারিভাবে পেনশনের আওতাভক্ত। সুতরাং সরকারি পেনশন স্কিমের বাইরে রয়ে গেছে জনগোষ্ঠীর এক বড় অংশ। তাদের জন্য এই স্কিম সুযোগের সদ্ব্যবহার হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে পেনশন স্কিম পেতে উন্নত দেশের তুলনায় অনেক দেরি হয়ে গেছে। নতুন এই উদ্যোগে বেশ কিছু উৎসাহব্যঞ্জক সুবিধা রয়েছে। গ্রাহকগণ নিজের জমাকৃত পেনশন তহবিল থেকে লোন নিতে পারেন। কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা জমা করলেই পাবেন পেনশন সুবিধা। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই কর্মসূচিকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সরকার শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকেই সর্বজনীন পেনশন উদ্যোগের সূত্রপাত। অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নই যার লক্ষ্য।
খুলনার বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফিরোজ শাহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন খান ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার। অনুষ্ঠানে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (ফান্ড ম্যানেজমেন্ট) মো. গোলাম মোস্তফা, খুলনার অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. হুসাইন শওকত।
এর আগে সর্বজনীন পেনশন মেলা উপলক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে খুলনা আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। দিনব্যাপী মেলায় বিভিন্ন ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ৫০টি স্টলে সর্বজনীন পেনশন বিষয়ে সেবা প্রদান করা হয়।
পরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো সকল নাগরিকের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জীবন বেশ কঠিন। তারা যদি এই স্কিমের আওতায় আসে সম্মানের জীবন পাবে। তাদের ভবিষৎ নিশ্চিত করার জন্য এই সর্বজনীন পেনশনের উদ্যোগ।
একই স্থানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
মোহাম্মদ মিলন/এমএএস