জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছে এনসিপি। তবে জাতীয় স্বার্থে ও দেশের প্রয়োজনে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়েও তারা উন্মুক্ত রয়েছেন।

বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নে নির্বাচনী উঠান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা ও অবস্থান থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে জাতীয় স্বার্থে ও দেশের প্রয়োজনে বাংলাদেশকে নতুন পথে এগিয়ে নিতে হলে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়েও আমরা ওপেন রয়েছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে, যদিও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখিনি আমরা এককভাবেও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

দলের প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে চাই যারা জনগণের কথা ভাববে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে, তারা মনোনয়নপত্র বিতরণ করছে। সারা দেশের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ফরম সংগ্রহ করছেন। ইতোমধ্যে অনেক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। যাচাই-বাছাই শেষে ১৫ নভেম্বরের পর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে।

গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে দলের অবস্থান জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশটি সঠিকভাবে জারি করা। সরকার কীভাবে এই আদেশ জারি করবে, তাতে কী থাকবে আর কী থাকবে না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। যদি সরকার জুলাই সনদের আদেশ যথাযথভাবে জারি করে, তাহলে সংকটের সমাধান সম্ভব এবং এর মাধ্যমেই গণভোটের প্রশ্ন নির্ধারিত হবে।

তিনি আরও বলেন, গণভোট নির্বাচনের দিনেই হোক বা আগে তাতে তেমন প্রভাব পড়বে না যদি জুলাই সনদের আদেশ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু আদেশটি সঠিকভাবে জারি না হলে গণভোটও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে টেকসই করতে পারবে না। আমরা আশা করি সরকার দ্রুত জুলাই সনদের আদেশ জারি করবে এবং জনগণের পক্ষেই অবস্থান নেবে।

এর আগে উঠান বৈঠকে আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়াই বড় সংকট। নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে সুরাহা না হলে নির্বাচনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। তাই এনসিপি নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে।

এনসিপির সদস্য সচিব অভিযোগ করেন, যারা বাংলাদেশের মানুষের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ আবারও নাশকতা চালাচ্ছে। বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই ফিরতে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে দেশকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। দেশের উন্নয়নের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে যত টাকা খরচ হয়েছে, তাতে ২০টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। কেউ সঠিক কথা বললেই তাকে জেলে ভরে রাখা হতো। আমরা জুলুম থেকে রক্ষা পেলেও অনিয়ম থেকে পারিনি। দেশের উন্নতির জন্য সিস্টেম অনুযায়ী দেশ চালাতে হবে, সেটাই এনসিপির লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, সরকারি বরাদ্দের টাকা সঠিক জায়গায় ব্যয় করা হবে। এনসিপি নির্বাচিত হলে জনগণের কল্যাণে নতুন আইন প্রণয়ন করবে। যাতে কেউ সরকারি বরাদ্দ তছরুপ করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদে মসজিদ-মন্দিরে বরাদ্দের পরিমাণ সাইনবোর্ডে প্রকাশ করা হবে। গ্রামাঞ্চলে জনসেবা কেন্দ্র স্থাপন করে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। জনগণের করের টাকায় ভাতা মর্যাদার সঙ্গে মানুষের কাছে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসনে শাপলা-কলি প্রতীকে লড়বেন এনসিপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আখতার হোসেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লা ও উপজেলাজুড়ে মিছিল, সমাবেশ ও উঠান বৈঠকের পাশাপাশি নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এআরবি