‎ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জির হিসেবে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি শীতের আনুষ্ঠানিক আগমনের কথা, যা এখনো কিছুটা বাকি। কিন্তু প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে জানিয়ে দিচ্ছে আগাম বার্তা। রাত গভীর হলে নামছে হালকা কুয়াশা, ভোরবেলা শিশিরের পরতে পরতে জমছে শীতের ছোঁয়া। শহরের অলিগলিতে শীতল বাতাস যেন বলছে শীত এবার একটু আগেই এসেছে। আর এই আগাম শীতেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে পিরোজপুরের পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানগুলো।

অন্য মৌসুমে যেসব দোকান নিস্তব্ধ পড়ে থাকে, সেগুলো এখন সরগরম ক্রেতাদের উপস্থিতিতে। ফলে শীতের শুরুতেই জমে উঠেছে পিরোজপুরের পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানগুলো।

‎অনেকের ধারণা, খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষজন শীত নিবারণে গরম কাপড় খোঁজে এসব পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোতে। তবে শুধু অল্প আয়ের মানুষজনই নয় বরং বিপণীবিতানগুলোর চেয়ে এসব পুরোনো গরম কাপড়ের মান ভালো ও দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত কখনো কখনো উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের উপস্থিতিও চোখে পড়ে।

‎শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আগের বছর গুলোতে পুরাতন শীতবস্ত্রের দোকানগুলো ছিন্নমূলভাবে শহরের কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও এবছর পিরোজপুর শহরের পুরাতন ঈদগাহ ময়দানের সামনে সারি সারি পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকান সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। শীতকে ঘিরে এসব দোকানগুলোতে বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত থেকে রক্ষা পেতে সাধ্যের মধ্যে ক্রেতারা পছন্দসই কাপড় স্তূপ থেকে খুঁজে নিচ্ছেন। অভিজাত দোকানগুলোতে গরম কাপড়ের চাহিদা থাকলেও বেশি ভিড় দেখা যায় পুরোনো শীতবস্ত্রের এই দোকানগুলোতে। পাশাপাশি এবছর একসঙ্গে একই জায়গায় সবগুলো দোকান পেয়ে স্বাচ্ছন্দ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।

‎শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে কাপড় খুঁজছিলেন নিয়াজ মোরশেদ। তিনি বলেন, এবার আগে থেকেই শীত অনুভূত হচ্ছে। তাই গরম কাপড় কিনতে এসেছি। স্তূপ থেকে পছন্দের কাপড় খুঁজে নিচ্ছি। এখানে খুব কম টাকায় ভালো জিনিস পাওয়া যায়। তবে এবছর দাম তুলনামূলক একটু বেশি। আমার ধারনা শীত আরও বাড়লে কাপড়ের কিছু আমদানি হলে দাম কিছুটা কমতে পারে।

‎মুহিদুল ইসলাম নামে এক মৌসুমি বিক্রেতা বলেন, কয়েক দিন ধরে প্রায় সব দোকানেই কমবেশি শীতের কাপড় কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। শীতের শুরুতে বেশ ভালোই বেচাকেনা চলছে। ক্রেতারাও বেশ আগ্রহ নিয়ে কেনাকাটা করছে। আমরা কাপড়ের লট কিনে আনি চট্টগ্রাম থেকে, এ বছর সেখানেই দাম বেশি। তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

‎আব্দুল্লাহ হামিদ নামে এক ক্রেতা বলেন, দিনে তেমন ঠান্ডা লাগে না, কিন্তু রাত আর ভোরে বেশ ঠান্ডা পড়ে। তাই ভাবলাম একটা হালকা গরম কাপড় কিনে নিই, তাই এখানে আসা। এখানে খুব ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়।

‎হেমায়েত হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, আমরা চট্টগ্রাম থেকে লট আনি। যে লট আগে কিনতাম ১০ থেকে ১১ হাজার, সেই লট এখন ২৪ থেকে ২৬ হাজার টাকা। আগে যেমন মাল পাওয়া যেত এখন মালও তেমন পাওয়া যায় না। এ কারণে দাম একটু বেশি নিতে হচ্ছে। মান যেমন দামও সেই অনুযায়ী হচ্ছে।

‎দীর্ঘ সময় ধরে খুঁজে খুঁজে কাপড় কিনছিলেন তানিয়া আক্তার। তিনি বলেন, এখানে বাইরের কাপড়গুলো কম দামে পাওয়া যায়। তবে পছন্দমতো খুঁজে নিতে হবে। যেগুলো দেশের বাজারে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। সেকারণেই মূলত এখানে আসা।

‎পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল কবির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছিন্নমূলভাবে এসব ব্যবসায়ীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় দোকান দিয়ে ব্যবসা করত। তবে এ বছর শহরের পুরাতন ঈদগাহ ময়দানের সামনে এসব দোকান বসেছে। ইতোমধ্যে আট থেকে ১০টি দোকান তৈরি হয়ে গেছে, আরও দোকান এখানে বসবে। আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও তাদের সব বিষয়ে নজর রাখছি। আশা করি এ বছর তারা ভালো একটা ব্যবসা করতে পারবে।

‎শাফিউল মিল্লাত/এএমকে