কিনেছেন ৭ বিঘা জমি ও ৮ থেকে ১০টি গরু, সঞ্চয় প্রায় ১০ লাখ টাকা

সুজনের বয়স তখন ৮ বছর। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড়। বাবা দরিদ্র কৃষক। অনেক কষ্টে দিনানিপাত হতো তাদের। তাই সুজন বিদ্যালয়ে না গিয়ে বাবার সঙ্গে মাঠে যেতেন। আসতে-যেতে তিনি দেখতেন, পাশের বাড়ির একজন হাঁস চাষ করেন। হাঁসের বাচ্চার দল, তাদের চলাফেরা, বেড়ে ওঠা তাকে আকৃষ্ট করত। তখন তিনি জানতে পারেন, হাঁস চাষে দ্রুত সফল হওয়া যায়।

একদিন সুজন সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনিও হাঁস চাষ করবেন। সফল হবেন। অনেক টাকা আয় করবেন। সেই থেকে শুরু করে আজ সুজন একজন সফল হাঁসের খামারি। কাজটিকে তিনি এখন পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

সরেজমিনে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার চরপুটিমারি ইউনিয়নের চিনার চর গ্রামে গেলে কথা হয় সুজনের সঙ্গে। সফল হাঁসচাষি সুজন মিয়ার খামার দেখতে গেলে তিনি তার এমন সফলতার গল্প শোনান।

জানা গেছে, সবচেয়ে বড় অর্জন নিজের গ্রামে তিনি আজ আদর্শ। গ্রামের অন্য দরিদ্র পরিবারের যুবকরা তাকে অনুসরণ করেন। মায়েরা তাদের বেকার ছেলেদের সুজনের মতো স্বাবলম্বী হতে বলেন। এটি তার জন্য বিরাট প্রাপ্তি বলে মনে করেন সুজন।

এলাকাবাসী জানান, গ্রামের বাড়িতে অল্প পুঁজি খাটিয়ে নিজে পরিশ্রম করে সৎভাবে যে অধিক মুনাফার মাধ্যমে সফলতা পাওয়া যায়, সুজনরা তার উজ্জ্বল উদাহরণ।

কথা হয় সফল হাঁসচাষি মো. সুজন মিয়ার সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর আমি একজন অংশীদার নিয়েছি। কিনেছি ২ হাজার হাঁসের বাচ্চা। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ জীবিত আছে। মৌসুম শেষ পর্যন্ত ৬ মাসে আমাদের খরচ হবে ৮ লাখ টাকার মতো। মৌসুমান্তে যদি ১ হাজার হাঁসও টেকে, তাহলে ডিম ও হাঁস বিক্রি করে আমাদের ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লাভ থাকবে।

খামার থেকে কেমন আয় করেছেন জানতে চাইলে সুজন বলেন, বর্তমানে হাঁসের খামার থেকে আয়ের টাকায় কিনেছি ৭ বিঘা জমি ও ৮ থেকে ১০টি গরু। সঞ্চয় করেছি প্রায় ১০ লাখ টাকা।

তার অংশীদার আমিনুল ইসলাম বলেন, এর আগে আমি আমার ভাইয়ের এক বন্ধুর সঙ্গে হাঁস চাষ শুরু করেছিলাম। তখন আমার ক্ষতি হয়েছে। এবার আমি সুজনের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছি। এ পর্যন্ত যা বিনিয়োগ হয়েছে, তাতে আমার লাভ হবে।

চরপুটিমারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান সুরুজ মাস্টার (৪০) বলেন, দীর্ঘদিন হাঁস চাষ করে সুজন ইতোমধ্যে প্রসংশা পেয়েছে। কারণ, কাজটি সে দীর্ঘদিন ধরে করে নিজে জড়িত থেকে করে। তার আর অন্য কোনো কাজ নেই। ঘুম ছাড়া সবটুকু সময় সে হাঁসের পেছনে ব্যয় করে। এটাই তার নেশা, এটাই তার পেশা।

ইসলামপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের চিনার চর গ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, সুজন যখনই আমাদের কাছে কোনো সমস্যা বা পরামর্শের জন্য আসেন, তখনই আমরা তাকে সেমতো সহায়তা করে থাকি।

হাঁস চাষে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে রফিকুল বলেন, কেউ যদি হাঁস পালনকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তাহলে তাকে প্রথমে এ কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। এবং কাজটি নিজেকেই করতে হবে। অন্যের সফলতা বা অন্যের পরামর্শে শ্রমিক দিয়ে এ কাজ করতে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে। কারণ, হাঁস পালনে উপযুক্ত পরিবেশ, পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ ও রোগবালাই প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জানা থাকা খুবই জরুরি।

এনএ