থানা ঘেরাও করেন এলাকাবাসী

বরিশালের গৌরনদীতে ইউপি নির্বাচনে ককটেল হামলায় নিহত মৌজে আলী মৃধার পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। হত্যাকারীদের মামলার আসামি না করে নিহতের ভাইকে গ্রেফতার এবং মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগে বুধবার (২৩ জুন) দুপুরে উপজেলা বন্দরের একটি নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহতের ছেলে ও মামলার বাদী নজরুল ইসলাম মৃধা।

নজরুল ইসলাম মৃধা বলেন, সোমবার (২১ জুন) ইউপি নির্বাচনে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদে প্রার্থী ছিলেন আমার চাচা ফিরোজ মৃধা। চাচার সমর্থক হিসেবে আমরা যখন ভোটকেন্দ্রে ভোট দিচ্ছিলাম তখন প্রতিপক্ষ ইউপি সদস্য প্রার্থী মন্টু হাওলাদার তার নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে সমর্থকদের নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। মন্টু হাওলাদারের ছোড়া ককটেলের আঘাতে আমার বাবা মৌজে আলী মৃধা ঘটনাস্থলেই মারা যান। 

তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আমি গৌরনদী মডেল থানায় গিয়ে ১৬ জন আসামির নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার ১৬ জন মূল আসামির ১৩ জনকে বাদ দিয়ে আমার অগোচরে আমার চাচা বিজয়ী ইউপি সদস্য ফিরোজ মৃধাকে হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি করেন। একই সঙ্গে আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেন। ইতোমধ্যে আমাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

নজরুল ইসলাম মৃধা বলেন, কী কারনে এবং কেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমন কাজ করেছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামিদের বাদ দিয়ে তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের আসামি করে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছেন।

নজরুল ইসলাম মৃধা অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদারের নির্দেশে ওসি (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান সোহাগ আমার দেওয়া মামলার এজাহার পাল্টে ফেলে তাদের তৈরি করা মনগড়া এজাহারে আমার স্বাক্ষর নেয়। যেটি ঢেকে রাখা হয়েছিল। নিয়ম থাকলেও এজাহারটি আমাকে পড়ে শোনানো হয়নি।

সংবাদ সম্মেলন শেষে ওই এলাকার কমপক্ষে তিন শতাধিক মানুষ গৌরনদী থানা ঘেরাও করেন। তারা মূল হত্যাকারী পরাজিত প্রার্থী মন্টু হাওলাদারকে গ্রেফতারের দাবি জানান। একই সঙ্গে গ্রেফতার বিজয়ী ইউপি সদস্য ফিরোজ মৃধার মুক্তি দাবি করেন। থানার ওসি আফজাল হোসেন থানা ঘেরাওকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা চলে যান। 

এ বিষয়ে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, ঘটনার দিন বা রাতে বাদীর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। ওসি (তদন্ত) তৌহিদুজ্জামান সোহাগ ফোনে আমাকে জানিয়েছিলেন নিহতের ছেলে মামলা করতে এসেছেন। আমি তাকে (ওসি-তদন্ত) বলেছি অভিযোগ নিয়ে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার জন্য। এর বাইরে কোনো কথা হয়নি। 

তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় উভয় মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা ককটেল ছুড়েছে বলে আমাদের জানিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। 

নিহতের ভাইকে গ্রেফতারের প্রশ্নে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য। এখন তদন্ত করে যেভাবে ঘটনা ঘটেছে সেভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২১ জুন) প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ১ নম্বর খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষে মৌজে আলী মৃধা নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের ভাইসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর