ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফেলের ফেসবুক পোস্ট

সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফেলের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের অভিযোগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম মুকুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার (২৩ জুন) তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২২ জুন) সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফেলের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেন অফিসের পিয়ন আক্কাস আলী ও অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম মুকুল। বিকেলে সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি আব্দুর রাফেল তার ফেসবুকে প্রকাশ করলে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর ওই অফিসের কর্মকর্তারা তাকে ফোন দিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে যেতে বলেন। 

অভিযুক্ত অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম মুকুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও ঘুষ লেনদেনের সময় দুদকের কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।

জানা গেছে, সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহের কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকেলে একটি দলিলের জন্য যান সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফেল। তার বড় ভাই ও ব্যাংক কর্মকর্তাও সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। অফিসের করণিক মুকুল ও আক্কাস রেজিস্ট্রির পর তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি ৩০ হাজার টাকার রশিদ চাইলে তারা জানান, কোনো রশিদ তারা দিতে পারবেন না। সে সময় পরিচয় দিয়ে কার্ড দেখালে তারা এ জন্য পাঁচ হাজার টাকা কমিয়ে ২৫ হাজার টাকা দিতে বলেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফেল জানান, তিনি সেখানে নিজের পরিচয় দেন। তারপরও দাবিতে অটল থাকেন পিয়নরা। এ পরিস্থিতিতে একপর্যায়ে তার বড় ভাই ১০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ সম্পন্ন করেন। পরে বিষয়টি ফেসবুকে তুলে ধরেন তিনি। ঘটনাটি জানাজানির পর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও দলিল লেখকরা বৈঠক করেন। এরপর আব্দুর রাফেলকে ফোন দিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং টাকা ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানান। পরে তিনি টাকা ফেরত না নিয়ে ঢাকা চলে আসেন।

সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রাফেলের দলিলটি ব্যাংকের মর্টগেজ দলিল। বিষয়টি দেখভাল করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। এটির জন্য টাকা নেওয়ার কথা নয়। তারপরও অফিসের কয়েকজন স্টাফ টাকা দাবি করেন। এটার সঙ্গে দলিল লেখকদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম মুকুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফেল বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস একটি সরকারি অফিস। আমি আমার পরিচয় দেওয়ার পরও তারা টাকা দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত। আমি প্রতিবাদ জানিয়ে বলি, জমি রেজিস্ট্রি করব না। 

তখন আক্কাস আমাকে বলে, জমি রেজিস্ট্রি না করলে না করেন। সে সময়ে আমি তাদের সঙ্গে তর্ক করলেও তারা আমার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করে। পরিচয় দেওয়ার পরও আমাকে ছাড়েনি। তাহলে সাধারণ জনগণ কীভাবে ভোগান্তির শিকার হয় তা সহজেই বোঝা যায়। এটার একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে বিএম আব্দুর রাফেল জমি রেজিস্ট্রি করতে অফিসে এসেছিলেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি তার কাজ করে দিয়েছি। তার কাছে দুজন টাকা নিয়েছিল। তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম মুকুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

রাজু আহমেদ/আরএআর