রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

করোনা রোগীদের স্রোত এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ঊর্ধ্বমুখী। করোনা চিকিৎসায় খোলা হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৪০৪ জন।

অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলেই হাসপাতালে মিলছে ঠাঁই। অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে। এখানে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) যেন সোনার হরিণ। ২০ শয্যার আইসিইউতে রোগী রয়েছেন আঠারো জন। অপেক্ষায় রয়েছেন আরও অর্ধশত।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের পর থেকেই করোনা সংক্রমণ বেড়েছে রাজশাহী অঞ্চলে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার পর এই অঞ্চলে ব্যাপক সংক্রমণ দেখা দেয়। সেই থেকে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যাক রোগী আসছে হাসপাতালগুলোতে।

প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছে করোনা চিকিৎসার বন্দবস্ত। কিন্তু মরণাপন্ন রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিইউ নেই জেলা সদরগুলোতে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও পাবনা থেকে রোগীরা আসছেন রামেক হাসপাতালে। এর বাইরে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার করোনা রোগীও আসছে এই হাসপাতালে।

হাসপাতাল পরিচালকের দফতর জানাচ্ছে, ২০ শয্যার আইসিইউ, ১৫ শয্যার কেবিন এবং ১০টি ওয়ার্ডে ৩২২টি সাধারণ শয্যা মিলিয়ে রামেক করোনা ইউনিটে এখন শয্যা রয়েছে ৩৫৭টি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ৪০৪ জন। অতিরিক্ত রোগী রয়েছেন ৪৭ জন।

সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ৩২ শয্যার এই ওয়ার্ডে। এখন রোগী ভর্তি ৫১ জন। সমানসংখ্যক শয্যার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৮, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৩৭ জন রোগী। 

৩৬ শয্যার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬ এবং ১৫ ওয়ার্ডে ৪৩ জন রোগী রয়েছেন এখন। ৪৮ শয্যার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪১ এবং ২৯/৩০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৭ জন রোগী। ১৬ শয্যার ৩৯/৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ জন, ১৫ শয্যার কেবিনে ১৪ জন এবং ১০ শয্যার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন রোগী রয়েছেন এখন।

২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৮ জন। এক দিনে করোনা ইউনিটে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড এটি। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ জন মারা গেছেন হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে। আইসিইউ ও ১ নম্বর ওয়ার্ডে চারজন করে মারা গেছেন। এছাড়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন, ১৫ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে একজন করে মারা গেছেন। 

বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৭২ জন করোনা রোগী। সন্দেহভাজন রোগী রয়েছেন ১৪৮ জন। এদের পাশাপাশি রয়েছেন  ৪৮ জন করোনা নেগেটিভ রোগী। করোনা নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে এসেছেন ৫৪ জন। একই সময়ের মধ্যে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৩ জন।  

রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রথম দিকে আলাদা বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু থাকলেও প্রথম দফা সংক্রমণ কমে আসায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। কেবল চালু ছিল রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে হাসপাতালে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কেবল ৮৮ সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা চলছিলো রোগীদের। শুরু থেকেই ছিল ২০ আইসিইউ শয্যা। গত ৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই শয্যাতেই রোগীদের চিকিৎসা সংকুলান হয়েছে।

এক মাসের ব্যবধানে ৬ জুন হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে ২৩২ এ উন্নীত করা হয়। ওই দিনও ভর্তি ছিলেন ৩৩৫ জন রোগী। এরপর ৯ জুন শয্যা বেড়ে ২৭১ এ দাঁড়ায়। ওই দিন ভর্তি ছিলেন ২৯০ জন। ১৫ জুন ২৭৩, ১৬ জুন ৩০৫ এবং ২১ জুন ৩০৯ শয্যায় উন্নীত হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) শয্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২২ এ।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিনই অতিরিক্ত রোগী আসছেন। ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ায় বেড়েছে সংক্রমণ। সেই সঙ্গে হাসপাতালে বড়েছে রোগীর চাপ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আপাতত কিছু রোগী মেঝেতে রাখা হচ্ছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর