একটি হাসপাতাল মানে মানুষের শেষ আশ্রয়। সেখানে আলো নিভে যাওয়ার খবর আসা মানেই উদ্বেগ, আতঙ্ক। সুনামগঞ্জের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র এখন এমন এক অনিশ্চয়তার মুখে। বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সংযোগ বিচ্ছিন্নের চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

২০১৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত টানা সাত বছরের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সংযোগ বিচ্ছিন্নের নোটিশ জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ সময়ে হাসপাতালের ছয়টি অ্যাকাউন্টে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ ৬২ হাজার ২৭২ টাকা। বহুবার নোটিশ পাঠানো এবং তাগাদা দেওয়ার পরও বকেয়া পরিশোধ না করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালের মোট ছয়টি সংযোগের মধ্যে দুটি এইচটি (উচ্চক্ষমতা) লাইনের মাধ্যমে হাসপাতালের প্রধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাকি চারটি সংযোগ পোস্ট-পেইড সময়ের বিল বকেয়া হিসেবে রয়েছে। হাসপাতালকে জানানো হয়েছে, চলতি মাসের ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না হলে ৯ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাসেল আহমাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। আমরা বারবার নোটিশ দিয়েছি, তত্ত্বাবধায়ককেও জানিয়েছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছি। এরপর বকেয়া না দিলে ৯ ডিসেম্বর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

এদিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান দাবি করেন,“আমি আসার আগেই কিছু বকেয়া বিল ছিল। এপ্রিল মাসেরও কিছু বিল রয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি পরিশোধের। হিসাব বিভাগ টাকা দিলে আমরা বিল পরিশোধ করব।

৯ ডিসেম্বর সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আরও বলেন, দুইপক্ষই সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমরা বিলের টাকা চেয়েছি। কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করি।

জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র এ হাসপাতাল। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে জরুরি চিকিৎসা, অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ ইউনিট ও ল্যাব পরিষেবাসহ অধিকাংশ সেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে।

তামিম রায়হান/আরকে