পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে তরুণদের দূর্বার আন্দোলন ও সংগ্রাম চিরস্মরণীয়। ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে তারুণ্যের সাহসী অংশগ্রহণ আর আত্মত্যাগ পশ্চিমা শোষণের অবসান ঘটিয়েছে। লাল-সবুজের পতাকার সঙ্গে বিশ্ব মাত্রচিত্রে যোগ হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের ঠিকানা। পাকিস্তানিদের কাছ থেকে মুক্তির স্বাদ ছিনিয়ে আনতে যারা মা-বাবা, ঘর-বাড়ির মায়াকে ছিন্ন করে অচেনা পথ ধরে গিয়েছিলেন রণাঙ্গণে তাদেরই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক।

একাত্তরের মার্চে উত্তাল দেশ। পরিস্থিতি থমথমে। রাজনৈতিক অস্থিরতাও তুঙ্গে। স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ পূর্ব বাংলা। সবার চোখে-মুখে স্বপ্ন স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ডের। তখন পাকিস্তানি শাসন-শোষণ আর নিপীড়নের বেড়াজাল থেকে মুক্তির আকাঙ্খা চেপে বসেছিল ৭ কোটি বাঙালির হৃদয়ে। দিন যতই যাচ্ছিল ততই যেন আন্দোলন-সংগ্রামে উজ্জীবিত হতে থাকে আপোসহীন বাঙালি জাতি।

ঠিক এরকম সময়ে একদিন এলাকার সমবয়সী এবং বড়ভাই তুল্য কয়েকজনের ডাক আসে আব্দুর রাজ্জাকের কানে। তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। তাকে স্কুল থেকে ডেকে নিয়ে বড় ভাইয়েরা জানালেন, ‘দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়তে হবে। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা হতে হবে।’ সবাই তাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আহ্বান করলেন। কোনো কিছু না ভেবে রাজি হলেন আব্দুর রাজ্জাক। মায়ের আঁচল আর বাবার ভালোবাসার কথা ভুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পা বাড়ান ভারতের পথে।

মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার নেপথ্যে

আব্দুর রাজ্জাকের বয়স তখনো পনেরোর কোঠা পার হয়নি। কৈলাশ রঞ্জন হাই স্কুলে মাধ্যমিকে পড়াশুনা চলছিল। টগবটে তারুণ্য, উড়নচণ্ডী মন। বৈষম্য আর শোষণ রুখে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে থাকার প্রত্যয়ে এই তরুণকে উদ্বুদ্ধ করেন মোজাফ্ফর হোসেন (প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা), অপিল উদ্দিন (প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা), মোজাফ্ফর হোসেন চাঁদ (প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা) ও বীর হারুন (বীর মুক্তিযোদ্ধা) সহ তার বেশ ক’জন সমবয়সী।

যাদের আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে পা বাড়ান আব্দুর রাজ্জাক। তাদেরই একজনের বাসায় একটু খেয়ে তারা সবাই মিলে রওনা হল এক অনিশ্চিত অজানার পথে। বাড়িতে কোনো রকমে বিদায় নিলেন আব্দুর রাজ্জাক। একটু ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন তাই বাড়ির অনুমতির জন্য অপেক্ষাও করলেন না। সবার সঙ্গে হেঁটে রওনা দিলেন। শহর থেকে দূরে হারাগাছে একটা বাড়িতে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেন তারা। সেখানে একটু খাবার খেয়ে আবার হাঁটতে শুরু করেন। এভাবে হেঁটে হেঁটে মাঝে নদীপথে নৌকায় পার হয়ে ভারতের গীতালদাহ গেলেন। সেখান থেকে বাসে করে যান দিনহাটা।

প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধের রণাঙ্গনে

দিনহাটায় পৌঁছানোর পর সেখানে রংপুরের কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের মাধ্যমে আব্দুর রাজ্জাক প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের দিকে একটি ক্যাম্পে। এখানে এক মাস পাঁচ দিনের একটা প্রশিক্ষণ নেন আব্দুর রাজ্জাক।

প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে দেয়া হয় একটা কম্বল, গামছা আর গেঞ্জি। সঙ্গে অস্ত্র হিসেবে কাউকে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও দশ রাউন্ড গুলি। আবার কাউকে এসএলআর নয়তো কাউকে এলএমজি দেওয়া হয়। অস্ত্র হিসেবে আব্দুর রাজ্জাকের হাতে ওঠে একটি এসএলআর।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। মতামতের ভিত্তিতে কাউকে লালমনিরহাটের দিকে নয়তো চিলাহাটির দিকে অপারেশনে পাঠানো হয়। তিনি চিলাহাটির দিকে যেতে মনস্থির করলেন। চিলাহাটি সীমান্তে অবস্থান নিয়ে কয়েকদিন রেকি করলেন। এরপর সেখানে একটি বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের যাতায়াতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের দলের মোবারক নামে একজন নিহত হবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

এভাবে রণাঙ্গনে কেটে যায় মাসের পর মাস। মুক্তিকামী মানুষের সহযোগিতায় আব্দুর রাজ্জাকেরা লড়াই চালিয়ে যান। গ্রামের মেঠোপথ, ঝোপঝাড়-জঙ্গল, নদী-নালা, খাল-বিল মাড়িয়ে হানাদারদের লক্ষ্য করে আঘাত হেনে শেষ করে দেওয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক আরও জানান, চিলাহাটি থেকে একটি দলের সঙ্গে তিনি চলে আসেন দেবীগঞ্জ। এর কিছুদিন পর যৌথ বাহিনীর সঙ্গে অভিযানে সৈয়দপুরে যান। সেখানে তাদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সৈন্যরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। ডিসেম্বরের শুরুতে সেখান থেকে ডোমার এলাকায় তার দায়িত্ব পড়ে। ডোমারে কিছুদিন থাকাকালীন বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে চারদিক। মুক্ত হয় পূর্ব বাংলা, রণাঙ্গন থেকে পিছু হটে পাকিস্তানি হানাদাররা। স্বাধীনতার সূর্য উদিত হতে দেখে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে ফেলে আসা মা-বাবা আর বাড়ি-ঘরের মায়ার টানে ছুটে আসেন রংপুর শহরে। 

মুক্তিযুদ্ধ শেষে জীবনযুদ্ধ শুরু

যুদ্ধের ময়দান থেকে বাড়িতে ফিরলেন আব্দুর রাজ্জাক। সেদিন ছিল এক অভাবনীয় ভালোলাগার দিন। তার ভাষায়, বাড়ি ফেরার মধ্যদিয়ে এক অন্যরকম আবেগ আনন্দ অনুভূতিতে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। একটা স্বাধীন দেশের জন্য কতদিন কত শত বুলেটের মুখে জীবন বাজি রেখে চলতে হয়েছিল তাকে। সেই স্বাধীন দেশে যখন মা-বাবার বুকে ফিরে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলেন।

দেশ স্বাধীনের পর কিছুদিন রিলিফ ও বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে চলছিল। এর মাঝে ১৯৭২ সালে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে ইচ্ছে থাকলেও আর লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারেননি তিনি।

অর্থনৈতিক দুর্দিনের মধ্যে পড়ে আব্দুর রাজ্জাকের মা-বাবার সংসার। বেকারত্ব কাটিয়ে যখন যে কাজ জুটেছে তাই করে উপার্জনের চেষ্টা করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। কখনও রিকশা, কখনও ভ্যান চালিয়েছেন। কখনও শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। এইসব করতেন কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব কিংবা সম্মানকে পরাজিত করে কারও কাছে হাত পাততেন না। যেন মুক্তিযুদ্ধ শেষে জীবনযুদ্ধ শুরু হয় আব্দুর রাজ্জাকের।

আব্দুর রাজ্জাকের আলোয় প্রাণবন্ত মঞ্চ

রংপুর জেলা পরিষদের ইলেকট্রিশিয়ান ভুলুর কাছ থেকে শিখেন বৈদ্যুতিক কাজ। বেকারত্ব ঘোচাতে ছোট পরিসরে রংপুর টাউন হলে মঞ্চ নাটকে আলোসজ্জার কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে নাটক, কবিতা, যাত্রাপালা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান_সবকিছুই আলোর প্রাণ হয়ে উঠেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ইলেকট্রিশিয়ান থেকে একজন দক্ষ আলোকশিল্পী হিসেবে তার কদর বাড়ে মঞ্চ নাটকের শিল্পীদের কাছে। তার আলোর খেলায় মঞ্চে প্রাণবন্ত হয়েছিল কতশত চরিত্র। আব্দুর রাজ্জাক আলোসজ্জ্বার পাশাপাশি চাকরি করেছে রংপুর শিল্পকলা একাডেমির নৈশ্যপ্রহরি পদে।

একসময় যার লাল, নীল, সাদা, কালো, উজ্জ্বল, অনুজ্জ্বল আলোয় ঝলমলে স্বপ্নময় হয়ে উঠতো মঞ্চ, সেই নেপথ্যের কুশীলব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের জীবন মঞ্চটাই থেকে যায় আলোহীন। একটা সময় এসে তিনি অভিমান করে বসেন। কারণ ছিল এইসব কাজে তেমন একটা অর্থনৈতিক লাভ নেই। টানাপোড়েনের সংসারে কোনো স্বাচ্ছন্দ্য আসে না। আলোসজ্জার কাজের জন্যেও বাজেট থাকত সীমিত।

১৯৯৪ সালের দিকে আব্দুর রাজ্জাক অনেকটা অভিমান করে আলোসজ্জার কাজ ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তার চলে যাওয়ার কারণে আলোসজ্জায় এক গভীর শূন্যতা তৈরি হয় নাটকপাড়ায়। এ সময় তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনেন একজন নাট্যশিল্পী। কিছুদিন পর রংপুর সদর হাসপাতাল-সংলগ্ন শ্যামাসুন্দরী খালেরপাড়ে একটা ছোট্ট ঘরে ঠাঁই হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধার।

ভালো নেই আলোহীন জীবন

এখন বয়স হয়েছে, দৃষ্টিশক্তিও কমে এসেছে তার। তবু স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার সংগ্রাম করে চলেছেন তিনি। এখনও স্বপ্ন দেখেন নাটকের মঞ্চে আলো ছড়াবেন। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া আব্দুর রাজ্জাক এখন আর মঞ্চে আলোর খেলায় দর্শকদের মাতাতে পারেন না। শারীরিক অসুস্থতারও মাঝেও সময় পেলেই ছুটে আসেন টাউন হল চত্বরে। হাতে থাকা কাগজ কলমে লিখেন নাটকের সংলাপ। পাশে কাউকে পেলেই শোনান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত গল্প।

তবে কথা ও স্মৃতিচারণে অনেক অসংলগ্নতা চলে আসে তার। তবুও মুক্তিযুদ্ধের কথা এবং প্রিয় টাউন হল চত্বরের কথা উঠলে আব্দুর রাজ্জাক আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। হাজারো আয়োজনে মঞ্চ আলোকিত করলেও নিজ জীবনের মঞ্চটাই আলোহীন হয়ে আছে আজও। নিজের একটা ঠাঁই নেই তাই বছর দশেক আগে শহর ছেড়ে অনেকটাই দূরে গঙ্গাচড়া উপজেলার উত্তরপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়ির একাংশে থাকছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান নিয়মিত, সেটাই এখন তার একমাত্র সম্বল।

আব্দুর রাজ্জাকের জীবন সঙ্গী আলেমা খাতুন। তাদের ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ে মারা গেছেন। এখন বড় ছেলে আলমগীর হোসেন বাবার পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তিনি টাউন হল এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোকসজ্জার কাজ করছেন। এর পরেরজন ছেলে আজমীর ও তৃতীয় ছেলে আজম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরি করছেন। চতুর্থ ছেলে কৃষিকাজ করেন।

আব্দুর রাজ্জাকের পরিচিতি

বীর মুক্তিযোদ্ধা শব্দটাই আব্দুর রাজ্জাকের বড় পরিচয়। তিনি এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু এ পরিচয়কে তিনি কখনো পুঁজি করেননি। অত্যন্ত বিনয়ী, হাসিখুশি এবং নম্র স্বভাবের এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সবাই কমবেশি পছন্দ করেন।

১৯৫২ সালের ১ অক্টোবর রংপুর শহরেই জন্ম আব্দুর রাজ্জাকের। এখানে নানার বাড়িতে তার বেড়ে ওঠা। শালবনে ছিল নানার বাড়ি আর তাই বাড়ির কাছের শালবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবনের শুরু। এরপর প্রাথমিকের গণ্ডি শেষ করে ভর্তি হয়েছিল কৈলাশ রঞ্জন হাই স্কুলে। সেখান থেকে বন্ধু আর বড় ভাইদের সঙ্গে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। আব্দুর রাজ্জাকের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর ৬৪।

আব্দুর রাজ্জাকের বাবা আব্দুর রহিম ও মা রহিমা খাতুন। তাদের কেউই বেঁচে নেই। তার বাবার আদি নিবাস ছিল ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটায়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর অনেকের মতোই তিনিও রংপুর চলে আসেন। অবস্থার পড়তিটা যেন তখন থেকেই। দিনহাটায় যা সহায় সম্পদ ছিল সেসবের অনেকটাই বেহাত হয়। মা রহিমা খাতুনের পৈত্রিক বাড়ি ছিল রংপুর শহরের শালবন এলাকায়। দেশভাগের আগে থেকেই তার বাবা আব্দুর রহিমের রংপুর যাতায়াত ছিল।

আব্দুর রাজ্জাক এক আলোর দীপ

রংপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠক, লেখক ও গবেষক রানা মাসুদ বলেন, সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার অন্যতম এক অনুষজ্ঞ আলোকসজ্জা। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান এবং দীর্ঘদিন রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন যার আলোসজ্জার ফলে উজ্জ্বলতা পেয়েছিল; করতে পেরেছিল নাটক অথবা সাংস্কৃতিক যে কোনো আয়োজন। পেশাগত কাজ হলেও অর্থ যাকে তাড়িত করেনি তিনি আমাদের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি আলোকিতজন, তিনিই আমাদের এক আলোর দীপ।

রানা মাসুদ আরও বলেন, কিছু কিছু মানুষের কাজ কিংবা অবদান আমাদের চোখের সামনে থেকে গেলেও হয়তো মনে হয় এ আর এমন কি। কিংবা কোনো কোনো মানুষ এতটাই নীরব নিভৃতচারী যে তাদের কাজের উপস্থাপনটা তারা করেন না। আমরাও আমাদের প্রাত্যহিক কাজের মাঝে সেসবের বিশেষত্ব বিশেষভাবে খেয়াল করি না। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক এমনই একজন মানুষ।

নাট্য ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক খন্দকার আব্দুল মজিদ হিরু বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক যখন আলোসজ্জার কাজ শুরু করেছিলেন তখন রংপুরের আর কেউ ছিল না। ফলে রংপুরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে তার আলোসজ্জার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এই কার্যক্রমের মাধ্যমে নাটক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার যেমন অবদানে আমরা গর্বিত, তেমনি নাটকপাড়ায় তার সহযোগিতা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

রংপুর জেলায় বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা

আট উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে রংপুর জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। বর্তমানে জেলায় সরকারি সুবিধা বা ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ১ হাজার ৯৩৯ জন। যার মধ্যে ৭০৫ জন বেঁচে আছেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী জানান, রংপুর জেলার আট উপজেলার মধ্যে বদরগঞ্জে ২০৯ জন, গঙ্গাচড়া উপজেলাতে ২১১ জন, কাউনিয়ায় ১৩৯, মিঠাপুকুরে ২৪৯, পীরগাছাতে ৩৭৪, পীরগঞ্জে ৯৫, তারাগঞ্জে ৪৯ এবং মহানগরসহ সদর উপজেলাতে ৬১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিয়মিতি পাচ্ছেন। যারা বেঁচে নেই, তাদের পরিবার সরকারিভাতা পাচ্ছে।

এ ছাড়া, মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বৃদ্ধি, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিতকরণ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পরিবারের সুরক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা বাড়ানো, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যথাযথভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে তিনি আহ্বান জানান।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে