বিজয় দিবসে রংপুরে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণ
বিভাগীয় নগরী রংপুরে যথাযোগ্য মর্যাদা, গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। পাকিস্তানি শোষণ-শাসন ও পরাধীনতার শিকল ভেঙে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের ৫৪ বছর পূর্ণতা পেল আজ। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও স্মরণে রংপুর জেলা প্রশাসন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
এসব কর্মসূচি থেকে একাত্তরের চেতনা ও চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধাহতদের স্মরণ করছে। শ্রদ্ধা নিবেদন, বিজয় শোভাযাত্রা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর ও আবেগঘন পরিবেশ।
বিজ্ঞাপন
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এতে অংশ নেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী, রংপুর জেলা প্রশাসক মো. এনামুল আহসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞাপন
পরে শহীদ আবু সাঈদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শন। কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীনতা আমাদের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো আমাদের দায়িত্ব। সামনে অবাধ সুষ্ট ও নিরোপক্ষ নিবাচন উপহার দিতে কাজ করা হচ্ছে।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিজয় দিবস আমাদের শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেয়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সমাজের নৈতিক দায়িত্ব।
রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে একটি বৈষম্যহীন, উন্নত ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রংপুর নগরীর সড়ক, সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিজয় মিছিল ও শোভাযাত্রা করা হয়। এ ছাড়া, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, কার্যালয়, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী এবং ক্রীড়া সংগঠনগুলো নানান কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে। এসব কর্মসূচির মধ্যদিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা।
এর আগে, মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা এক মিনিটে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এনসিপি, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি রংপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, টিসিএ রংপুরসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের মুহূর্তে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে