নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় দেয়াল নির্মাণ করে এক প্রতিবন্ধী নারীর বাড়িতে যাতায়াতের একমাত্র পথ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার আপন বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে। প্রতিবন্ধী বোনের সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই এই অমানবিক কাজ করেছেন অভিযুক্ত ভাই। গত প্রায় এক বছর ধরে মই বেয়ে ১০ ফুট উঁচু দেয়াল টপকে বাড়িতে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন ওই নারী ও তার বোন। নিজ ঘরেই কারাবন্দি জীবনযাপন করছেন প্রতিবন্ধী কামরুন্নাহার।

ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের সিরাজনগর নয়াচর উত্তরপাড়া গ্রামে। 

ভুক্তভোগী কামরুন্নাহার পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয়। জন্মের এক বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে তার দুই পা বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকেই হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করতে হয় তাকে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বিয়ে হয়নি। জীবিকা নির্বাহের জন্য বড় বোন তাছলিমা বেগমের সঙ্গে সেলাই কাজ করে দিন কাটান তিনি।

ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাবা-মা জীবিত থাকাকালে বড় বোন তাছলিমা ও কামরুন্নাহারকে দেড় শতাংশ জমি লিখে দিয়ে যান। তবে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ওই জমির দিকে নজর দেন বড় ভাই কামরুজ্জামান কামাল। বোনদের কাছ থেকে সম্পত্তি লিখে নিতে চাপ সৃষ্টি করতে একপর্যায়ে তিনি বাড়ির যাতায়াতের পথেই দেয়াল নির্মাণ করে দেন।

এতে করে প্রতিবন্ধী কামরুন্নাহার একেবারেই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। বড় বোন তাছলিমা মই বেয়ে দেয়াল টপকে বাইরে গেলেও কামরুন্নাহার সম্পূর্ণভাবে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের সেলাই কাজসহ স্বাভাবিক জীবিকা নির্বাহ।

ভুক্তভোগী তাছলিমা বেগম বলেন, মা-বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই ভাই আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছে। প্রায় এক বছর আগে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। আমরা এখন বন্দির মতো জীবন কাটাচ্ছি। মানুষের কাছে- প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েও কোনো সমাধান পাইনি।

প্রতিবন্ধী কামরুন্নাহার বলেন, জন্মের পর থেকেই প্রতিবন্ধী হলেও কখনো হাল ছাড়িনি। কিন্তু ভাই আমার জীবনের একমাত্র পথটাই বন্ধ করে দিয়েছে। এমনভাবে বাঁচার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো মনে হয়।

এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য গাজী মাজহারুল ইসলাম পলাশ বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। চেয়ারম্যানসহ আমরা কয়েকবার সালিসের চেষ্টা করেছি, কিন্তু অভিযুক্ত কামাল কোনো সিদ্ধান্ত মানেননি। কারো যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রশাসনের মাধ্যমেই এর সমাধান হওয়া উচিত।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান কামাল বলেন, আমার জায়গায় তারা ঘর তুলেছে। বিচারেও তাদের ওই জায়গা ছাড়তে বলা হয়েছে। তারা তা মানেনি। উল্টো আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। প্রতিবন্ধী বোনকে ভরণপোষণসহ আমার সঙ্গে থাকার প্রস্তাব দিয়েছি, কিন্তু সে রাজি হয়নি।

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, কারো চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। তবে বিষয়টি জমি সংক্রান্ত এবং আদালতে মামলা চলমান। আদালতকে উপেক্ষা করে প্রশাসনের পক্ষে এক তরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তবুও সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো পক্ষই মানছে না।

ঘরবন্দি নয়, অন্য সবার মতো স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় প্রতিবন্ধী কামরুন্নাহার ও তার বোন। মানবিক এই সংকট নিরসনে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

আরএআর