কুড়িগ্রামে নিজ বাড়িতে শায়িত হলেন দুই বীর সৈনিক
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ড্রোন হামলায় নিহত কুড়িগ্রামের দুই সেনা সদস্যের মরদেহ দেশে এসেছে। গতকাল শনিবার তাদের মরদেহ বাংলাদেশে পৌঁছায়।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে উলিপুর হেলিপ্যাডে আনা হয়। পরে সেখান থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিজ নিজ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর প্রিয়জনকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই পরিবারের স্বজনরা। এ সময় উলিপুর ও রাজারহাটের গ্রামগুলোতে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ২০ উলিপুর হেলিপ্যাডে অবতরণ করে সেনাবাহিনীর লাশ বহনকারী হেলিকপ্টার। পরে ২টা ২৬ মিনিটে মরদেহ নিয়ে বাড়িতে রওনা হয়। বিকেলে ৪টার দিকে শহীদ শান্ত এবং মমিনুল ইসলামকে পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
নিহত সেনাসদস্যরা হলেন সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (৩৮) ও সৈনিক শান্ত মন্ডল (২৬)। শান্ত মন্ডল কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামের মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা। তিনি সাবেক সেনাসদস্য নুর ইসলাম মন্ডল ও সাহেরা বেগমের ছোট ছেলে। তার বড় ভাই সোহাগ মন্ডল বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
অন্যদিকে সৈনিক মো. মমিনুল ইসলামের বাড়ি উলিপুর উপজেলার উত্তর পান্ডুল গ্রামে। তিনি দুই কন্যাসন্তানের বাবা। তার বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে, ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ বছর।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের স্থানীয় সময় দুপুর ৩টা ৪০ মিনিটে আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিক বেসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে কুড়িগ্রামের এই দুই সেনাসদস্য ছাড়াও নাটোর, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ ও গাইবান্ধার বাসিন্দা ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শান্ত মন্ডল ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ৫ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। তার স্ত্রী দিলরুবা খন্দকার বৃষ্টি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
শান্তর বড় ভাই সোহাগ মন্ডল বলেন, ‘ড্রোন হামলার দিন বিকেলেও ওর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয়েছিল। রাতে ড্রোন হামলার খবর পাই। পরে শান্তর সহযোদ্ধাদের ভিডিও কল দিয়ে নিশ্চিত হই, আমার ভাই আর নেই।’
সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম প্রায় ১৮ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি ছয় মাস প্রশিক্ষণ নেন। চলতি বছরের অক্টোবরে ছুটিতে বাড়িতে এসে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে যান।
মমিনুল ইসলামের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘যাওয়ার সময় কইছিল, মা কান্না করো না, আমি তাড়াতাড়ি ফিরমু। এইভাবে ফিরবে জানলে বাপ ধনকে মুই(আমি) বিদেশ যাবার দিনু না হয়।’
দূর দেশের মাটিতে বিশ্ব শান্তির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কুড়িগ্রামের দুই সেনাসদস্যের এই মৃত্যু জেলায় গভীর শোকের পাশাপাশি এক ধরনের নীরব গর্বের অনুভূতিও তৈরি করেছে।
মমিনুল ইসলাম বাবু/আরকে