সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, কাজ বন্ধ করে দিলো এলাকাবাসী
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ফাগুয়াড়দিয়ার ইউনিয়নে একটি সড়কের নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) উপজেলার সাইলকোনা গ্রামে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর তোপের মুখে কাজ বন্ধ করে চলে যান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, জিওবিএম প্রকল্পের আওতায় সাইলকোনা এলাকায় ৯০০ মিটার রাস্তা পাকাকরণের (সংস্কার) কাজ পায় নাটোরের লালপুরের ‘এম এইচ কনস্ট্রাকশন ফার্ম’। এই কাজের চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ লাখ ১৫ হাজার ২৭৬ টাকা।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজ শুরুর পর থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছে। রাস্তা নির্মাণে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম ইট, বালু ও খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে ৩ নম্বর ইটের খোয়া এবং বালুর পরিবর্তে মাটি দিয়ে সড়কের বেজ বা ভিত্তি প্রস্তুত করা হয়েছে। দিনের আলোতে নিম্নমানের এসব সামগ্রী আড়াল করতে উপরে নামমাত্র ভালো সামগ্রী দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া খোয়া ও মাটি শক্ত করার জন্য রোলার চালানোর সময় নিয়ম অনুযায়ী পানি ব্যবহার করা হয়নি।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাবাসী রাস্তার বিভিন্ন অংশ কোদাল দিয়ে খুঁড়ে নিম্নমানের কাজের প্রমাণ দেখাচ্ছেন। সামান্য খোয়া সরালেই নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে শক্ত মাটি। সংস্কার কাছে ব্যবহারের জন্য রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা খোয়াগুলোর সঙ্গেও রয়েছে মাটির মিশ্রণ।
বিজ্ঞাপন
সাইলকোনা গ্রামের গ্রাম পুলিশ হাসান আলী ও স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জু এবং সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারের লোকজন রাতের আঁধারে লোকচক্ষুর আড়ালে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করত। এলাকাবাসী ভালো কাজের দাবিতে বাধা দিলে উল্টো ধমক দেওয়া হতো। পানি ছাড়াই রোলার করায় রাস্তাটি কয়েক মাসও টিকবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের কার্যসহকারী মাসুদ রানা জানান, রাস্তার এজিংয়ে ব্যবহৃত পুরাতন ইটগুলো ৩ নম্বরের ছিল। এছাড়া ভাটা থেকে আসা ২৬ গাড়ি খোয়ার মধ্যে ৩ গাড়ি খোয়া তুলনামূলক কম মানের ছিল। তবে বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
তিনি দাবি করেন, বিগত দিনে এই রাস্তায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল। যেহেতু রাস্তায় থাকা আগের সামগ্রী ইস্টিমেটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে,তাই সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এম এইচ কনস্ট্রাকশন ফার্মের মালিক মাসুদ হাসান বলেন, এটি মূলত জিওবিএম-এর আওতায় রাস্তার রিপিয়ারিং বা সংস্কার কাজ। এখানে পুরাতন ইট ও খোয়া ব্যবহার করা হবে, যা সিডিউলে উল্লেখ আছে। এলাকার লোকজন বিষয়টি না বুঝে বাধা দিয়েছেন।
ফাগুয়াড়দিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এএসএম লেলিন জানান, কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি প্রকৌশলীদের জানানো হয়েছে।
বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী অনুপ কুমার ঘোষ বলেন, তারা সবেমাত্র কাজ শুরু করেছেন। এলাকাবাসী বিষয়টি হয়তো বুঝতে পারেননি। আমি নিজে সরেজমিনে গিয়ে কাজটি পরিদর্শন করব।
আশিকুর রহমান/আরএআর