সুদানে ড্রোন হামলায় শহীদ জাহাঙ্গীর আলমকে চোখের জলে শেষ বিদায়
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ ড্রোন হামলায় শহীদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীর আলমকে (৩০) সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় ঢাকার সেনানিবাস থেকে হেলিকপ্টারে করে জাহাঙ্গীর আলমের মরদেহ পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হেলিপ্যাডে পৌঁছায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ নেওয়া হয় উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে তার নিজ বাড়িতে। সাড়ে ৫টার দিকে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সামরিক মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।
বিজ্ঞাপন
জানাজায় সেনাবাহিনীর কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর নিয়াজ মাখদুম, পাকুন্দিয়া সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার আবির আহমেদসহ সেনাবাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, নিহতের পরিবার-স্বজন ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী জানাজায় অংশ নেন।
এর আগে ঢাকার সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হলে সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সামরিক সম্মানে তাকে দাফন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
জাহাঙ্গীর আলম সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে গত ১৩ ডিসেম্বর আবেই এলাকায় একটি শান্তিরক্ষা ঘাঁটিতে সংঘটিত সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় শাহাদাত বরণ করেন। একই হামলায় আরও পাঁচজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, শহীদ ছয় শান্তিরক্ষীর মরদেহ শনিবার এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম মরদেহগুলো গ্রহণ করেন।
শহীদ জাহাঙ্গীর আলম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আকন্দ বাড়ির হযরত আলীর ছেলে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেস ওয়েটার পদে কর্মরত ছিলেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মেজো। তার বড় ভাই মো. মোস্তফা প্রবাসী এবং ছোট ভাই মো. শাহিন মিয়া কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। স্ত্রী ও তিন বছরের একমাত্র সন্তান ইরফানকে রেখে গত ৭ নভেম্বর শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে সুদানে যান তিনি।
সন্তানের ভালো ভবিষ্যতের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশের মাটিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। বাবার স্নেহ বুঝে ওঠার আগেই চিরতরে পিতৃহারা হলো ছোট্ট ইরফান।
প্রায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন শহীদ জাহাঙ্গীর আলম।
মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয়/আরএআর