‘নদীতে ইলিশ নাই, কেমনে যে দিন কাটতাছে, শুধু আল্লাহই ভালো জানে। সারাদিন নদীতে দুই বেলা জাল ফেলে শূন্য হাতে বাড়ি যাই। প্রতিদিন খালি জাল ফালাই মাছ আর উঠে না। পরিবার-পরিজনের খুব দূরবস্থা। শুধু আমার না, আমার সঙ্গের সবারই একই অবস্থা। ঠিকমতো খাইতে পাই না, আবার পোলাপাইন পড়ামু কেমনে?’

বুকভরা কষ্ট নিয়ে চাঁদপুর ডাকাতিয়ার পাড়ে কাজ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন পদ্মা-মেঘনায় ইলিশশিকারি কাশেম ছৈয়াল (৫৫)।

শুধু কাশেম ছৈয়াল নন, তার মতো ইব্রাহীম খলিল, মো. খালেকসহ অসংখ্য জেলের একই কথা, পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের দেখা নেই। ইলিশের যেভাবে আকাল পড়েছে, তাতে জেলেদের সংসার চালানো এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মাদ্রাসা রোড এলাকার জেলে ইব্রাহীম খলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নদীতে ১২-১৩ জন মিলে বড় ইলিশের গুল্টিজাল বাই। কিন্তু বর্তমান সময়ে নদীতে ইলিশ না থাকায় ৬-৭ জেলে নিয়ে মাছ ধরতে যাই। ইলিশ না পাইলে মহাজনের টাকা দিমু কেমনে? তাই লোক কমিয়ে মাছ ধরি। নদীতে যদি মাছ থাকত, তাইলে এখন কি ডাঙায় বইসা কাজ করতাম? 

তিনি বলেন, দুই-তিন বছর ধরে নদীতে ইলিশ কমে গেছে। মূলত জাটকা মৌসুমে সব মাছ কারেন্ট জাল দিয়া ধইরা নিয়া যায়। তাইলে জাটকা না টিকলে বড় ইলিশ আইব কেমনে।

শরীয়তপুর জেলার সখিপুর এলাকার জেলে মো. খালেক বলেন, আমরা শুধু ইলিশ ধইরাই সংসার চলে। এখন এই পেশা থুইয়া রিকশা-ভ্যান কোনো কাজই করতে পারি না। সরকার দুই মাস জাটকা রক্ষা অভিযান দেয়। এই অভিযান দিয়া কী লাভ, যদি কারেন্ট জাল দিয়া সব মাছ ধইরা লায়? কারেন্ট জাল থাকলে একদিন পদ্মা-মেঘনার ইলিশ হারিয়া যাইব। সরকারের উচিত কারেন্ট জাল বন্ধ করা। তাইলে ইলিশ রক্ষা পাইব।

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ইলিশ শিকারে ব্যস্ত থাকেন। দু-এক বছর ধরে ভরা মৌসুমেও দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশের। ইলিশ শূন্যতায় হাহাকার চলছে এ অঞ্চলের জেলেপাড়াগুলোতে। অভাব-অনটন আর চরম হতাশার মধ্যে দিন পর করছে এখানকার জেলে পরিবার।

নদীতে জাল ফেলে দু-একটা ইলিশের দেখা মিললেও তা হয়তো পরিবারের আহারেই চলে যায়। তবে জেলেদের এখন একটাই দাবি, সরকার যাতে খুব দ্রুত অবৈধ কারেন্ট বন্ধ করে দেয়।

ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইলিশ মাছ পরিভ্রমণশীল। তারা দল বেঁধে চলাফেরা করে এবং সাগর থেকে উপকূল হয়ে প্রধান নদ-নদীতে আসে। এখন বর্ষার মৌসুম, বৃষ্টি হচ্ছে, পানিও বাড়ছে। আশা করি শিগগিরই জেলেরা জালে ইলিশ পাবেন।

শরীফুল ইসলাম/এনএ