গণমাধ্যমে হামলা করে কখনো বাংলাদেশের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার সৈকত সরকারি কলেজ মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির রাজনৈতিক কর্মী বাংলাদেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে হামলা করেছে। তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করেছে এবং নির্বাচন যেন না হয়, সেই চেষ্টাও করেছে। আমরা মনে করি, গণমাধ্যমে হামলা করে কখনো বাংলাদেশের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে কখনো ভূলুণ্ঠিত করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা অনতিবিলম্বে যারা গণমাধ্যমে হামলা করেছে, তাদের বিচার দাবি করছি এবং সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আপনারা দেখেছেন ওসমান হাদী জীবিত থাকা অবস্থাতেও বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম হামলার শিকার হয়েছে, বিশেষ করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। তখনও ওসমান হাদী গণমাধ্যমে বলেছিলেন, গণমাধ্যমে হামলা কোনো সমাধান নয়। বরং কোনো গণমাধ্যম আপনার পছন্দ না হলে বিকল্প শক্তিশালী গণমাধ্যম গড়ে তুলুন। আমরা মনে করি, অতি দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একশ্রেণির রাজনৈতিক কর্মী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছেন। এটি আমরা মনে করি, তারা দাবি করতেই পারেন। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আরও অনেক ব্যক্তি রয়েছেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, ওই রাজনৈতিক কর্মীরা অন্য দায়িত্বশীলদের পদত্যাগ চান না। আমরা মনে করি, যত ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন এবং যারা এটি পরিচালনা করেন, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশিষ্ট সহকারী, যিনি কথিতভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কাজ ও দায়িত্ব পালন করেন, তারও সমান দায় রয়েছে। তাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের পাশাপাশি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীকেও অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, সেই রাজনৈতিক দলের কর্মীরা কোনোভাবেই প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদত্যাগ চান না। এতে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে উল্লেখ করে নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গত ১৭-১৮ বছর ধরে মানুষের ভোটাধিকারের পক্ষে এবং গণতান্ত্রিক যাত্রাকে এগিয়ে নিতে যিনি কাজ করে যাচ্ছেন, সেই নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবেন। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধকোটি মানুষ ঢাকায় তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। ইতোমধ্যে সারাদেশের অসংখ্য নেতাকর্মী ঢাকায় উপস্থিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কবে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তার আগমন শুধু জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মীর কাছেই এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গত ১৭ বছর ধরে যারা বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন, এমনকি যারা বিরোধী রাজনীতি করছেন, তারাও মনে করছেন তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যখন একটি ইতিবাচক ও গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছিল এবং দেশ একটি গণতান্ত্রিক যাত্রায় সঠিক রোডম্যাপের দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই জুলাই-আগস্টের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ওসমান হাদীকে দুষ্কৃতিকারী ফ্যাসিস্টরা হত্যা করেছে। তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া ও বানচাল করার উদ্দেশ্যে। সরকার যখন দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই ওসমান হাদিকে হত্যার মাধ্যমে সেই অপচেষ্টা চালানো হয়। তবে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পর জুলাই-আগস্টের সম্মুখ সারির যোদ্ধাসহ সব রাজনৈতিক কর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন কিভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুস্থ ও ত্রয়োদশ নির্বাচনকে আরও সুন্দর করা যায়। এতে বাংলাদেশের মানুষ আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আপনারা জানেন, ওসমান হাদী নিজেও ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন।

ওসমান হাদি দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় বিশ্বাস করতেন উল্লেখ করে নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ওসমান হাদির সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন, একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই গণতান্ত্রিক ধারায় চলতে হবে। অবৈধ ও ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কোনো সরকার কখনোই দেশের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। সে কারণেই ওসমান হাদি নিজেও নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন এবং নির্বাচিত হয়ে দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে চেয়েছিলেন। আমরা দেখেছি, সন্ত্রাসীরা ওসমান হাদির সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা মনে করি, তারা হয়তো একজন ওসমান হাদিকে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে পেরেছে, কিন্তু তার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন, ভোটাধিকারের স্বপ্ন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশকে কখনো বিচ্যুত করা যাবে না।

অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

খেলায় সদর উপজেলার দল অদম্য সদরকে হারিয়ে সুবর্ণচর উপজেলার দল তারুণ্যের সুবর্ণচর জয়লাভ করে। অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ বাবুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি মিজানুর রহমানসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসিব আল আমিন/এআরবি