ফেনীতে সামান্তা শারমিন
সংস্কারের রাজনীতি মাঠ থেকে উধাও করা যাবে না
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, আপনারা সরাসরি সম্প্রচারে দেখেছিলেন কীভাবে ঐকমত্য কমিশনে পাওয়ারের ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছিল। যারা প্রত্যেক বাক্যের সামনে-পেছনে গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু তারাই মানুষের ভাগ্য নিয়ে মাছের বাজারের মতো দরাদরি করেছেন। সংস্কারের পথে অবস্থান নিয়ে অল্প কিছু দল রাজপথে ও সংস্কার কমিশনে অটুট থেকেছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের কিং কমিউনিটি সেন্টারে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট আয়োজিত বিপ্লবী ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে শোক ও সংহতি সমাবেশ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সামান্তা শারমিন বলেন, এনসিপি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও এবি পার্টি বিপ্লবের পক্ষে। জুলাই-আগস্টে যে অভ্যুত্থান হয়েছে সেটি চলমান রয়েছে। বিরাজমান শান্ত অবস্থা যারা অস্থিতিশীল করছেন, তাদেরও হুঁশিয়ার করতে হবে। কারণ এটি আসল অস্থিতিশীল অবস্থা নয়। যদি এই নির্বাচন দিয়েই আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে সংস্কার হয়েছে, তখন দেশে যে অস্থিতিশীলতা নেমে আসবে সেটি এই দলগুলো কল্পনাও করতে পারছে না। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা এখনো মাঠ ছাড়েনি। সংস্কারের রাজনীতি মাঠ থেকে উধাও করা যাবে না।
কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংস্কার বিরোধী ঐক্য জোট করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি সংস্কারের রাজনীতির প্রয়োজন। কিন্তু আমরা ক্রমাগতভাবে দেখতে পাচ্ছি কয়েকটি দল অন্য আরও অনেকগুলো দলকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার বিরোধী ঐক্যজোটে রূপান্তরিত হচ্ছে। আপনারা যেটিকে শুধু নির্বাচনী জোট হিসেবে দেখছেন, সেটি শুধু নির্বাচনী জোট নয়, এটি একটি সংস্কার বিরোধী জোট। মাঠ থেকে জুলাই সনদ ও সংস্কার উভয়ই বিলোপ করা হয়েছে। কিছু প্রার্থী নিজেদের দল-মার্কা বিলুপ্ত করে বড় বড় দলের নাম-মার্কা ধারণ করে এলাকায় এলাকায় যাচ্ছেন, কিন্তু মাঠে ময়দানে ঘুরে গত দেড় বছর ধরে যে সংস্কারের কথা আদায় করার চেষ্টা করেছি, সেই কথাগুলো তারা একবারের জন্যও বলছেন না।
বিজ্ঞাপন
সামান্তা শারমিন বলেন, হাদির মৃত্যুর পর তার মরদেহের ওপরে রাজনীতি করছেন, কিন্তু আপনারা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তার হত্যাকারী ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। বাংলাদেশের যেসব তদন্ত সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে তারা কতটুকু সংস্কারের মুখোমুখি হয়েছে তা দেশের মানুষ জানতে চায়। নির্বাচনে প্রতিজন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের নিরাপত্তার বিষয়ে রোড ম্যাপ ক্লিয়ার করতে হবে। নির্বাচনী ডামাডোল দিয়ে মাঠে জুলাইয়ের যোদ্ধাদের অনিরাপদ করা যাবে না। স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনসহ প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
নির্বাচনে সংস্কার ও গণভোটে হ্যাঁ-কে বিজয়ী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট শুধুমাত্র নির্বাচনী জোট নয়, এটি আগামী ২০ বছরের জন্য দেশের সংস্কারের জোট। এই জোট দেশের মানুষকে নতুন বাংলাদেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা দেখানো ও তরুণ রাজনীতিকে মাথা উঁচু করানোর জোট। আপনারা নিজেদের দলের কথা যত না বলবেন, সংস্কার ও গণভোটের কথা তত বেশি বলবেন। আমাদের দলের যতটুকু সক্ষমতা রয়েছে ততটুকুর মধ্যে থেকে সংস্কার ও গণভোটে হ্যাঁ-কে বিজয়ী করে আনব ইনশাআল্লাহ। কোনো পতিত শক্তি এবং পতিত শক্তির সঙ্গে হাত মেলানো নতুন শক্তি গণভোটে হ্যাঁ-কে না-তে রূপান্তর করতে পারবে না।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান ও ফেনী-২ আসনে দলীয় প্রার্থী মজিবুর রহমান মঞ্জু। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, এবি পার্টির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল, এনসিপির জেলা কমিটির আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম সৈকত। এবি পার্টি ফেনী জেলা কমিটির আহ্বায়ক মাস্টার আহছান উল্ল্যাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে সঞ্চালনা করেন এনসিপির জেলা কমিটির সদস্য সচিব শাহ ওয়ালী উল্লাহ মানিক ও এবি পার্টির সদস্য সচিব অধ্যাপক ফজলুল হক।
তারেক চৌধুরী/আরএআর