চলাচলের রাস্তা ইজারা দিয়ে আমের বাজার
রংপুর নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের বাইপাস সড়ক ও ফুটপাতের দুইপাশে অস্থায়ী টিনের চালা তুলে বসানো হয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের বাজার। এই ব্যবসা ঘিরে সড়কের ওপরে বিচ্ছিন্নভাবে দোকানপাটও দেওয়া হয়েছে। এতে করে ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীরা।
যানবাহন নিয়ে চলাচলে ঘটছে বিপত্তি। তবে আম বাজারের ঠিকাদারের দাবি, রংপুর সিটি করপোরেশনের কাছ সাড়ে ৪ লাখ টাকায় রাস্তাটির দুপাশ ইজারা নিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর নগরের সবেচেয় ব্যস্ততম কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা। সেখানে জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য বাস টার্মিনাল মসজিদের পেছনে বাইপাস সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ ওই সড়ক ও ফুটপাত এখন আম ব্যবসায়ীদের দখলে।
এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে আশপাশের এলাকার মানুষদের চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটছে। গাড়ি নিয়ে বের হলে ওই সড়কে আটকা পড়ে অপচয় হচ্ছে সময়ও। শুধু তাই নয়, আমের বাজার ঘিরে করোনার সংক্রমণ ঝুঁকিও বেড়েছে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কারও মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
বিজ্ঞাপন
আম বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, সিটি করপোরেশন ওই সড়ক ও ফুটপাত ইজারা দিয়েছেন। দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়াও চাঁদা তোলার জন্য রয়েছে লাইনম্যান। আম ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কিছু কুরিয়ার সার্ভিস পরিবহন সেবা দিচ্ছেন।
মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ থেকে আম বিক্রি করতে আসা আজাহার আলী বলেন, এই বাজারে কেউ কাউকে মানতে চায় না। কোনো সিস্টেম নেই। ইজারাদারের লোকেরা জমার নিতে এসে প্রায়ই হট্টগোল করে। টাকা দিতে দেরি হলে মারপিট করাসহ কখনও কখনও আমের ডালি তুলে ফেলে দেন। বাজারে কোনো নিয়মনীতি নেই।
একই এলাকার বকুল মিয়া ও শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা তো প্রতিদিন হাট ইজারার টাকা দেই। কিন্তু ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছি না। রাস্তার ওপর যানজট লেগে থাকে। সাধারণ পথচারীরা গালিগালাজ করে। অনেকেই বিরক্ত হয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতেও চান। কিন্তু সিটি করপোরেশনের লোকজন থাকায় কেউ চাইলেও ঝামেলা করতে পারে না।
সেখানকার ইজারাদার জাবেদ ইকবাল বলেন, হাঁড়িভাঙা আমের জন্য এই বাস টার্মিনালের বাজারের আলাদা একটা পরিচিতি রয়েছে। এটা তো নতুন বাজার নয়। প্রতি বছরের আমের মৌসুমে এখানে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। এবারও তাই হচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বাজারটি ইজারা নেওয়া হয়।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল গাফফার বলেন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের আমের বাজার ইজারার বিষয়টি সিটি মেয়র ইচ্ছায় হয়ে থাকে। কাউন্সিলর হিসেবে তাকে এসব বিষয়ে ডাকাও হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মসজিদের পেছনের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে আমের বাজার বসিয়েছে। এখান থেকে সমিতির উন্নয়ন ফান্ডে কোনো টাকাপয়সা জমা হয় না। বরং এই বাজারের কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
রংপুর সিটি করপোরেশনের বাজার শাখার ইনর্চাজ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকাতে আমের বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকার বিনিময়ে ইজারা দেওয়া হয়েছে, তা তিনি জানাতে পারেননি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাট, পদগঞ্জ, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুরসহ কিছু এলাকাতে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সব জাতের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙা আম।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর