কিশোরগঞ্জের নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম শীতের ভোগান্তি। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে হাওর-অধ্যুষিত এই উপজেলায় তাপমাত্রা নেমে আসে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এদিন সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ১১টায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিকলীতেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পুরো এলাকাজুড়ে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে সকাল থেকেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। খোলা জায়গায় কাজ করা দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, হাওরের জেলে পরিবার, শিশু ও বয়স্করা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে অনেককে আগুন জ্বালিয়ে কিংবা অস্থায়ী উপায়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দার তীরঘেঁষে চায়ের টং দোকানদার জনি মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ, শীতের সময় চা বিক্রি কিছুটা বেশি হয়। কিন্তু এই কদিন যে শীত পড়ছে, পানিটা পর্যন্ত স্পর্শ করা যায় না। এমন অবস্থায় দোকান খুলব কীভাবে? পরিবার নিয়ে বেশ সমস্যায় আছি।
বিজ্ঞাপন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তরের তারুণ্যের সদস্য আবুসামা বলেন, এ বছর শীত খুব বেশি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছোট ছোট উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। কিন্তু এই শীতে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের পাশে তেমন কেউ নেই। তাই সরকার বা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, অন্তত শহরের ফুটপাতে যারা গৃহহীন অবস্থায় আছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো হোক।
এদিকে কনকনে ঠান্ডার রাতে জড়সড় হয়ে থাকা এসব মানুষের কষ্ট লাঘবে মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে শীতার্ত মানুষের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে শতাধিক কম্বল বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা। এ সময় তিনি নিজ হাতে শীতার্ত ব্যক্তিদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববারের তুলনায় আগামীকাল সোমবার শীতের তীব্রতা আরও কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং চলতি মাসজুড়েই শীতের প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে শীতের অনুভূতি সহসা কমার সম্ভাবনা নেই বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
নিকলী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম মাছুম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে হাওর-অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করে যাচ্ছেন। আমরা যারা বাসায় থেকে শীত অনুভব করছি, ছিন্নমূল মানুষের ক্ষেত্রে সেই কষ্ট আরও বেশি। সে কারণে যেখানে ভাসমান মানুষ রয়েছে, সেখানে কয়েক দিন ধরেই কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয়/এআরবি