জাল দলিল মামলায় সাব-রেজিস্ট্রার দুপুরে কারাগারে, সন্ধ্যায় জামিন
জাল দলিল প্রস্তুত ও দলিলের ভলিউম ঘষামাজার অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার মনীষা রায়কে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নীলফামারী আমলি আদালতে হাজির করা হলে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুনরায় জামিন আবেদন করা হলে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ৫০০ টাকার বন্ডে মুচলেকা দিয়ে তাকে জামিন দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
মনীষা রায় এর আগে, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুমন সরকারের বাবা আক্কাস আলীর মৃত্যুর পর তার নামে থাকা ৪৮ শতাংশ জমি বণ্টননামা দলিল অনুযায়ী ওয়ারিশরা ভোগদখল করে আসছিলেন।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর চাপানী ইউনিয়নের বাসিন্দা গোলাম হাবিব ও রাজিব হোসেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সহযোগিতায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ওই জমির মধ্যে সাড়ে সাত শতাংশ জমি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন।
এ ঘটনায় ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর সুমন সরকার বাদী হয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মনীষা রায়সহ সাতজনের বিরুদ্ধে নীলফামারী আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, দলিল লেখক সেলিম ইসলাম, গোলাম হাবিব হাদী, রাজিব হোসেন, মিজানুর রহমান, ফজলুল হক ও আনোয়ার হোসেন।
পরবর্তীতে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ডিমলা থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে জমিতে অনধিকার প্রবেশ এবং প্রতারণার উদ্দেশে মূল্যবান দলিল জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার আর্থিক লাভের আশায় প্রকৃত মালিকানা যাচাই না করেই দলিল রেজিস্ট্রি সম্পাদন করেন।
মামলার বাদী সুমন সরকার বলেন, আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আমরা আইনগতভাবেই ভোগদখল করে আসছিলাম। অথচ কাগজপত্র যাচাই না করেই আমাদের জমি অন্যের কাছে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
এ ছাড়া, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালায়। অভিযানে একটি বায়নানামা দলিলে প্রথমে ৩৩ লাখ টাকা উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীতে রেজিস্ট্রির সময় ১৬ লাখ টাকা মূল্য দেখানোর অভিযোগ ওঠে। এতে সরকার প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে।
রেদওয়ান মিলন/এএমকে