ভুক্তভোগী নাসিমুল হক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করায় এক শ্রমিক নেতাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে দুই ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

সোমবার (২৮ জুন) দুপুর ১২টার দিকে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল তার অফিসের একটি কক্ষে উপজেলা ফার্নিচার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নাসিমুল হককে দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন।  

ভুক্তভোগী নাসিমুল হক ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ি ইউনিয়নের সুরানপুর গ্রামের মোজাহারুল ইসলামের ছেলে। 

নাসিমুল হক বলেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ করায় আজ আমাকে ইউএনও অফিসে ডাকা হয়। অফিসে গেলে ভোলাহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাউছার আলম সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছো? আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কিছুই করতে পারবে না। আমাদের সঙ্গে সবাই আছে। সব অফিস ম্যানেজ করা আছে। 

শ্রমিক নেতা নাসিমুল হক বলেন, কিছুক্ষণ পর ইউএনও স্যার আমাকে ডাক দেন। ইউএনও স্যারের কাছে গেলে তিনি প্রশ্ন করেন অভিযোগকারী তুমি? আমি বললাম, জ্বি স্যার, গ্রামবাসীর পক্ষে আমি অভিযোগ করেছি। কিসের জন্য অভিযোগ করেছো? এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি জানাই, সরকারি কাজে ফাঁকি দেওয়া হয়েছে তাই। কোনো কাজ ভালোভাবে করা হয়নি। এরপর ইউএনও স্যার নির্দেশ দিলেন, বেটাকে বন্দি করে রাখো। এরপর আমাকে দুই ঘণ্টা একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। 

তিনি আরও বলেন, দুই ঘণ্টা আটকে রেখে ছাড়ার পর হুমকি দিয়ে তারা বলেন- এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মাদক ও চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে জেলে পাঠাবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর অভিযোগ করার কারণে আমাকে এভাবে হেনস্তা করা হলো। তাহলে এখন কার কাছে যাব? আমি জনগণের স্বার্থে এলাকার সরকারি কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেছি। আমরা শ্রমিক বলে কি মানসম্মান নাই? এভাবে অবিচার করা হবে আমার প্রতি? 

গত ১৬ জুন ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগটি পাঠানো হয়। এছাড়াও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক এবং জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে একই স্থানে পরপর দুই অর্থবছরে দুইবার বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেমন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে গোহালবাড়ি ইউনিয়নের সুরানপুর জবানের গভীর নলকূপ থেকে বিজিবি ক্যাম্প বাগডোগরা জাহিরুলের নলকূপ পর্যন্ত রাস্তায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় ৯ মেট্রিক টন গম এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। কিন্তু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ৯ মেট্রিক টন গমের যে প্রকল্প ছিল সেখানে তৎকালীন প্রকল্প সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদকে ছাড়া গম উত্তোলন করে হরিলুট করা হয়েছে। এছাড়াও কাজের বিনিময়ে টাকায় যেখানে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে রাস্তায় মাটি ভরাট করার কথা সেখানে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে চার লাখ টাকার কাজ অল্প টাকা খরচ করে করা হয়েছে। 

এরই সূত্র ধরে সোমবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাউছার আলম সরকার কাজের কথা বলে অভিযোগকারী মো. নাসিমুল হককে ইউএনও অফিসে ডাকেন। দুপুর ১২টার দিকে তিনি গেলে তাকে ইউএনও অফিসের একটি কক্ষে তালা মেরে আটকে রাখা হয়। 

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাউছার আলম সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

তবে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমর কুমার পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আটকে রাখার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি প্রধানমন্ত্রী বরাবর কেন ও কী বিষয়ে অভিযোগ করেছেন সেটি জানার জন্যই তাকে অফিসে ডাকা হয়েছিল। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি পেছন থেকে নানা রকম চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরপরও সকল বাধা বিপত্তি দূর করে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান থাকবে। 

প্রধানমন্ত্রীর বরাবর করা অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর