মগবাজার বিস্ফোরণে নিহত তুষারের বাড়িতে মাতম
দুর্ঘটনার দিন রোববার (২৭ জুন) বিকেলে স্ত্রী মৌসুমী আক্তারকে ভিডিও কলে বলেছিলেন সোমবার (২৮ জুন) বাড়ি ফিরবেন। সন্ধ্যার পরে বাবাকে জানিয়েছেন একই কথা। লকডাউনে শর্মা হাউস বন্ধ থাকবে তাই বাড়িতে লম্বা সময় কাটাবেন সবার সঙ্গে।
মগবাজার বিস্ফোরণে ক্ষতবিক্ষত ওসমান গণী তুষার আহত হয়ে হাসপাতালে রাতেই মৃত্যুর আলিঙ্গন করে পরদিন সকালে বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে। লোকারণ্য বাড়িতে শুধুই এখন মাতম। স্ত্রী মৌসুমী বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
মা তাসলিমা বেগম ও বোনদের কান্নার ধ্বনি আর আহাজারিতে শোকের করুণ আবহ ফুটে উঠেছে শাহরাস্তির চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে নিহতের বাড়িতে। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে স্তব্ধ বাবা আনিসুর রহমান নয়ন।
ঢাকার মগবাজারের বিস্ফোরণে নিহতদের একজন তুষার বিস্ফোরণস্থল শর্মা হাউসে কাজ করতেন। ঘটনার দিন বিকেলে শিশুকন্যা সুবাহানা তাইয়েবাকে নিয়ে শর্মা হাউসে এসেছিলেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার জান্নাত। পার্শ্ববর্তী এলাকার হওয়ায় জান্নাত ভাই ডাকতেন তুষারকে।
তুষারের চাচা মো. তাজুল ইসলাম জানান, বিস্ফোরণের পর নিজের আহতাবস্থার কথা ভুলে শিশু সুবহানাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন তুষার। পরদিন সকালে একই গাড়িতে তুষারের লাশ গ্রামের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে রামগঞ্জের ভাটরায় নিয়ে যাওয়া হয় জান্নাত ও সুবহানার লাশ।
বিজ্ঞাপন
মুমূর্ষু অবস্থায় ৯ মাসের একটি শিশুকে বুকে জড়িয়ে তুষার হয়তো নিজের স্ত্রীর গর্ভে থাকা ৪ মাসের অনাগত শিশুকেই স্পর্শ করছিলেন, এমনটি ধারণা চাচা তাজুল ইসলামের।
তুষারের মামা আলী হোসেন জানান, তুষার কোরআনে হাফেজ ছিলেন। পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে শর্মা হাউসে কাজ করতেন। বড় বোন তাহমিনা আক্তার নাজনীন (২৬) বলেন, ভাই মাত্র ৮ মাস আগে বিয়ে করেছেন। তুষারের স্ত্রী ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
বাবা আনিসুর রহমান নয়ন জানান, অল্প কয়দিন আগে তুষার আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে অপারেশন করিয়েছিল। আমি আগে প্রবাসে ছিলাম, বর্তমানে বেকার। তুষারই আমার সংসারের হাল ধরেছিল। গত সোমবার সকালে নিজ হাতে আমার স্বপ্নকে কবরে শুইয়েছি।
তুষারের মা তাসলিমা বেগম বলেন, রমজানের ঈদের ছুটি শেষে আমার বাবা (তুষার) ঢাকা গিয়েছে। লকডাউনে বাড়ি আসবে বলেছিল। আমার বাবা বাড়িতেই (কবরস্থানে) ঘুমিয়ে থাকবে, আর মা বলে ডাকবে না।
তুষারের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, ঘটনার দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিডিও কলে তুষার আমার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। পরদিন বাড়ি আসবে বলেছিল। তার আসাটা এত করুণ হবে, ভাবতে পারিনি।
শরীফুল ইসলাম/এমএসআর