লকডাউনে বিপাকে শরীয়তপুরের মুচি সম্প্রদায়
করোনা ঠেকাতে চলমান লকডাউনে বন্ধ রয়েছে কাজ। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। শরীয়তপুরের মুচি সম্প্রদায়ের জন্য এই লকডাউন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছ।
নিজের অসহায়ত্বের কথা জানাতে গিয়ে ডামুড্যা বাজারের মুচি বাবুল বাবু বলেন, আগে দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হলেও বিধিনিষেধের ফলে দিনে ৫০ টাকা রোজগার করা অনেক কঠিন। ঘরে চাল নেই। চাল নিলে ঘরে রান্না হবে। কিন্তু এখনও ৪০ টাকার কাজ করতে পারিনি। চাল কিনব কী দিয়ে আর অন্য কিছুই বা কিনব কীভাবে? সকালে মরিচ দিয়ে ভাত খেয়ে এসেছি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ছয় জনের পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম। চার যুগের বেশি সময় ধরে মুচির কাজ করি। সরকারি সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও পাইনি। এখন দিনে যা পাই তা দিয়ে যা হয় তাই কিনি। তিন বেলার খাবার এখন এক বেলায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।
কথা হয় আরেক মুচি মধু বাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাদিনে ৬০ টাকার কাজ করেছি। গতকাল সকালে ১০ টাকা আর দুপুরের পর ৬০ টাকা, এই মোট ৭০ টাকার কাজ করেছি। এতে চারজনের সংসারের বাজার করেছিলাম। আসার সময় বউ বলে দিয়েছে তেল নিতে। এখনও এক লিটার তেলের দাম রোজগার করতে পারিনি। মানুষ ঘর থেকে বের হয় না। জুতা-স্যান্ডেল-ব্যাগ কই পাব। যার অনেক দরকার তারাই শুধু বের হয়। তাও হাতে গোনা।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় মুচিরা জানান, উপজেলা ও জেলা মিলে প্রায় ১০০ জন মুচি আছে। কারোর কাজ নেই। সবাই মিলেও দুই হাজার টাকা মনে হয় রোজগার করতে পারেনি। কাজ না থাকায় মানুষ বাজারে আসে না। আবার অনেকে দুপুর পর্যন্ত থেকে চলে গেছে।
তারা জানান, জেলায় ১০০ জনের মতো মুচি রয়েছেন। লকডাউনের নাম শুনলেই সবার বুকে কেঁপে ওঠে। আমরা দিনে যা রোজগার করি তা দিয়ে বাজার করে বাসায় যাই। জমানো কোনো টাকা থাকে না। আর বিধিনিষেধ দেওয়ায় কাজের সুযোগও আরও কমেছে। এখন দিনে ৫০ টাকাও আয় হয় না। এতে সংসারের পেছনে খরচ, ছেলেমেয়ের পেছনে খরচ, কিস্তিসহ অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে।
হরি বাবু নামে এক মুচি জানান, ছোট থেকে জুতার কাজ করে আসছি। ছাগলের চামড়া কিনেও বিক্রি করতাম। একটা চামড়া বিক্রি করলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা থাকত। আর এখন ১০ টাকা দিয়েও কেউ চামড়া কিনে না।
রাম ও হারুনসহ আরও কয়েকজন বলেন, করোনার প্রথম প্রথম কিছু সরকারি সহযোগিতা পেয়েছি। লকডাউন শুরুর পর আর কোনো সহযোগিতা পাইনি। সরকারি সহযোগিতা আমাদের জন্য সোনার হরিণের মতো। সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়া ছাড়া আমাদের মুক্তি কেউ দিতে পারবে না।
জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় দফায় বিধিনিষেধের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চাল ও টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। জেলায় ৮ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিলে কর্মহীন মানুষদের মাঝে পৌঁছে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, কর্মহীন যারা বিপাকে রয়েছেন তাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সহায়তার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসন বরাদ্দ অনুযায়ী অসহায় মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে যাচ্ছেন। এতের নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট কমছে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/ওএফ