২১ বছর ভাত খান না লাভলু
ভাত আমাদের একমাত্র খাদ্য নয়, তবে প্রধান খাদ্য। ভাত প্রধানত শর্করা সরবরাহ করে। এতে শর্করা ৭৯ শতাংশ, স্নেহ ৬ শতাংশ, কিছু পরিমাণে আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। আমাদের খাবারের পদ বা বৈচিত্র্যও আবর্তিত হয় ভাতকে ঘিরে। ওজন নিয়ন্ত্রণে অনেকে প্রথমেই ভাত বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু বাঙালিদের প্রধান খাদ্য ভাত হলেও জন্মের পর থেকে ২১ বছর ভাত না খেয়েই জীবন পার করছেন শিক্ষার্থী মাহিদ হাসান লাভলু।
বিজ্ঞাপন
এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, ভাতের সঙ্গে শারীরিক ক্ষতির কোনো সম্পর্ক নেই। ভাত একধরনের শর্করা জাতীয় খাবার। সে ক্ষেত্রে আলু ভাতের চাহিদা পূরণ করবে।
নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বাউসা কবুতরমারী গ্রামের আলম মিয়া ও লাল ভানু দম্পতির বড় ছেলে লাভলু। তিনি শেরপুর সরকারি কলেজে গণিত বিভাগে অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে লাভলুর বাড়িতে গেলে তার বাবা আলম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রথমে ভাবতাম না। লাভলু জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত তার মায়ের দুধ পান করেছে। নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাস পর তাকে বাড়তি খাবার চালের তৈরি নরম খাদ্য ও ভাত মুখে দিলেই সে বমি করে ফেলে দিত। যতবার দেওয়া হতো, ততবারই সে বমি করত।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এটাকে রোগ মনে করে অনেক চিকিৎসক দেখিয়েছি। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো রোগ ধরতে পারেননি। একপর্যায়ে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত সে শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করে বড় হতে থাকে। একদিন হঠাৎ দেখি লাভলু ছোলা বুট খাচ্ছে। এরপর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার খাবারে যুক্ত হতে থাকে সেদ্ধ আলু, ডাল, ডিম, দুধ ইত্যাদি।
তিনি বলেন, আমি রিকশা চালাই। আয়রোজগার কম। কোনোমতে লাভলুর খাবার ও ৩ সন্তানের পড়ালেখার খরচসহ সংসার চালাতে আমার খুব কষ্ট হয়। লাভলুর জন্য ছোলা, ডাল, এংকর কিনতে হয়। মাঝেমধ্যে টাকার অভাবে কিনতে পারি না।
লাভলুর মা লাল ভানু জানান, লাভলু ভাত ও চালের তৈরি খাবার খেতে চাইত না। একসময় তাকে মারধর করতাম। একবার রাগ করে তাকে তিন দিন কোনো খাবারই দিইনি। তখন সে বিভিন্ন গাছের পাতা সংগ্রহ করে রস করে খেয়েছে। পরে বুঝতে পারি যে তার ভাতের প্রতি অনীহা আছে। এখন তার চাহিদা অনুযায়ী সেদ্ধ আলু, ডিম, ছোলা, ডাল রান্না করে দিতে হয়।
এ বিষয়ে বানেশ্বর্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাজহারুল আনোয়ার মহাব্বত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই জানি যে লাভলু এখনো ভাত বা চালের তৈরি কোনো কিছু মুখে দেয় না। এ বিষয়টির জন্য পুরো এলাকায় সে পরিচিত। অনেক দূর থেকে কৌতূহল নিয়ে মানুষ তাকে দেখতে আসে।
শিশু ও কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মজিবর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, লাভলু এক অদ্ভুত মানুষ। আমরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তার পরিপাকতন্ত্র বা লিভারে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের কাছে মনে হয় সে যেহেতু ছোট থেকেই ভাত খায়নি, তাই ভাত বিষয়ে তার মানসিক কোনো সমস্যা আছে। এ জন্যই ভাত মুখে দিলে বা গন্ধ পেলেই সে বমি করে।
শেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসেন বলেন, ভাতের সঙ্গে শারীরিক ক্ষতির কোনো সম্পর্ক নেই। ভাত একধরনের শর্করা জাতীয় খাবার। লাভলু যেহেতু আলু খায়, সে ক্ষেত্রে আলু ভাতের চাহিদা পূরণ করবে। মানুষের শরীরের গ্রোথ (বেড়ে ওঠা) নির্ভর করে বিভিন্ন খাবারের ওপর। যেমন শর্করা, আমিষ, স্নেহজাতীয় খাবার। লাভলু যেহেতু ভাত ছাড়া অন্য সব খাবার খেতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তার শরীর গঠনে অন্য কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নির্ভর করে শরীরে উপস্থিত বিভিন্ন ভিটামিন মিনারেল এগুলোর ওপর। তবে আমার যেটা মনে হয়, লাভলুর কোনো মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা আছে। অথবা এটি তার অভ্যাসগত সমস্যা।
এনএ