মাগুরার মহম্মদপুরের ঘোপ বাঁওড়ে অতিথি পাখির বিচরণ

অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ইছামতির বিল ও ঘোপ বাঁওড়। প্রতি বছরের মতো এবছরও বিল-বাঁওড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলছে এসব পাখি। তাছাড়া পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ, কিচিরমিচির আর জলে ডানা ঝাপটানোর শব্দ ভেঙে দিচ্ছে গ্রামের নির্জনতা।

প্রতিদিনই মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন এখানে। অথচ বিষটোপ, জালসহ ফাঁদ পেতে শিকার করা হচ্ছে এসব পাখি। এতে করে হারাতে বসেছে বিল-বাঁওড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য। 

জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় ৫ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতির পাখি নির্দিষ্ট সময়ে শীতপ্রধান দেশ থেকে ছুটে আসে এই দেশে। একটু উষ্ণতা, আশ্রয় ও খাবারের জন্য তারা পাড়ি দেয় হাজার মাইল পথ।

উপজেলার নালিয়ার বিল, কাতলাশুরের বিল, ইছামতির বিল, ফলিয়ারবিলসহ বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় ও নদীর অববাহিকায়ও এসব পাখির বিচরণ চোখে পড়ে। 

বালিহাঁস, সারস পাখি, ডুবুরি পাখিসহ নানা অতিথি পাখির সঙ্গে দেশীয় পাখির কলকাকলি ইছামতির বিল ও ঘোপ বাঁওড়ের সৌন্দর্য আরও মনোরম করে তোলে। এসব পাখির ঘুম ভাঙানি কলরবে ঘুম ভাঙে বিল-বাঁওড়বাসীর। নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু, নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছেন। 

এসব এলাকা ঘুরে জানা যায়, এক শ্রেণির শিকারিরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব পাখি শিকার করছেন।

নহাটা ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান মিয়া বলেন, আমাদের দেশে যেসব অতিথি পাখি আসে সেগুলো আমাদের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ কিছু অসাধু চক্র বিষটোপ, ফাঁদ পেতে এদেরকে হত্যা করে। আমাদের এই উপজেলায়ও অতিথি পাখি শিকার করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।

এসব পাখি বীজের বিস্তরণ ও পরাগায়ন ঘটিয়ে আমাদের ফসলেরও উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। পাখি কিন্তু আমাদের চিত্তবিনোদনের একটি অন্যতম উপাদান। এদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে আমাদের দেশের একটি সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে। পাখি হত্যা বন্ধে ইতোমধ্যে আমরা সচেতনতামূলক সাইকেল র‌্যালি করেছি।

হোপ অব মহম্মদপুরের ফাউন্ডার রেজোয়ান আহমেদ রোজেল বলেন, অতিথি পাখি আমাদের বন্ধু, আমাদের ঐতিহ্য। এসব পাখি অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। অতিথি পাখি শিকার বন্ধে আমরাও সচেতনতামূলন বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।

বিল্লাল হোসেন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, শীতের শুরুতেই অতিথি পাখির দেখা পাই। অতিথি পাখি ঝাঁক বেঁধে বিচিত্র স্বরে ডাকতে ডাকতে উড়ে চলা— আমাদের মুগ্ধ করে তোলে। আমি এ সময় বাড়ি আসলে পাখিমেলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, আমি সরেজমিনে ঘোপ বাঁওড়ে গেছি। অতিথি পাখি শুধু প্রকৃতির শোভাবর্ধনই করে না, ভারসাম্যও রক্ষা করে। পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমএসআর