বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ভুয়া অ্যাডভাইস দাখিলের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা জালিয়াতি করার অভিযোগে ৯ জনের নামে মামলা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) শ্রীপুর থানায় মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রহমান, অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোলে কর্মরত তানভীর, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নওদাবস নিউবড়ভিটা গ্রামের রনজিত কুমার, প্রবাশ চন্দ্র রায়, সুবল চন্দ্র মোহন্ত, কমল চন্দ্র রায়, ফুলমনি রাণী ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার শাহেনা আক্তার।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসারের স্বাক্ষরকৃত অ্যাডভাইসের মাধ্যমে ৫টি বিল পরিশোধের (সরকারি চাকরিজীবীর আনুতোষিক) লক্ষে মোট ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা প্রদানের নিমিত্তে অভিযুক্ত কর্মচারী তানভীর অ্যাডভাইসের হার্ডকপি ব্যাংকে নিয়ে আসেন।

মোটা অংকের টাকা হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী এ সময় ব্যাংক থেকে হিসাবরক্ষণ অফিসে ফোন করার পর অভিযুক্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এসব অ্যাডভাইসের নিশ্চয়তা দেন। অ্যাডভাইস অনুযায়ী সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী কুড়িগ্রাম শাখায় অভিযুক্ত রনজিত কুমারের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রবাশ চন্দ্র রায়ের হিসাব নম্বরে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা পাঠানো হয়।

এছাড়া সুবল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা, ফুলমনি রাণীর হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা প্রদান করা হয়। এমন ঘটনার পরদিন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ তৈরি হলে তারা নাগেশ্বরী কুড়িগ্রাম সোনালী ব্যাংকের শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করে হিসাব নম্বরগুলো যাচাই করেন।

এতে জানা যায়, হিসাবধারীরা সরকারি চাকরিজীবি নয় তারা প্রত্যেকেই কৃষক। পরে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অধিকতর খোঁজ নিয়ে জুনিয়র অডিটর খলিল উদ্দিন এ বিলে ঝামেলা রয়েছে বলে জানান। পরে জালিয়াত চক্রের এমন কাণ্ডে দ্রুত নো পেমেন্টের জন্য সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী শাখাকে বলা হয়।

এরপর অভিযুক্ত শাহেনা আক্তার সোনালী ব্যাংক উত্তরখান শাখা থেকে উক্ত টাকাগুলো উত্তোলনের লক্ষে নাগেশ্বরী শাখার চেকগুলো জমা দেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চতুরতায় শেষ পর্যন্ত সরকারি টাকা হাতিয়ে নিতে পারেনি জালিয়াত চক্র। এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় ২৯ জুন অভিযুক্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বিলটি স্থগিত রাখার জন্য পত্র প্রেরণ করেন।

শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ বলেন, তার সরলতার সুযোগে অফিসেরই কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এ বিল ব্যাংকে প্রেরণ করেন। এছাড়াও তানভীর ওই অ্যাডভাইসগুলোতে আমার স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসিয়েছেন। তিনি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন।

তবে সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানার হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, বিধি অনুযায়ী হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে অ্যাডভাইস আসলে আমরা টাকা পরিশোধে বাধ্য। মোটা অংকের টাকা হওয়ায় আমরা প্রথমে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি এর নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। তবে আমাদের অনুসন্ধানে এ জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে।

শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শিহাব খান/এমএসআর