করোনার উপসর্গ থাকায় টেস্ট করান এনামুল মিয়া। রোববার রিপোর্ট এসেছে- করোনা পজিটিভ। আজ সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হতে এসে পড়লেন বিপাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করেও ভর্তি হতে পারেননি। তিনি যখন ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন, তখন করোনা আক্রান্ত শরীরটা বয়ে নিয়ে কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছেন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।  

সোমবার (৫ জুলাই) দুপুরে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে করোনা রোগীদের এমন অনেক ভোগান্তির চিত্র।

ভুক্তভোগীদের একজন করোনা পজিটিভ এনামুল। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নে।

এনামুলের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কথা বলে ঢাকা পোস্ট। এনামুল বলেন, ‘আমি করোনা আক্রান্ত। আমাকে প্রথমে বলল ইমার্জেন্সি সেবা নিতে, সেখানে গেলে বলল ১৭ নাম্বার রুমে যেতে। সেখানেও কাজ না হওয়ায় বলল কন্ট্রোল রুমে যেতে। কিন্তু কন্ট্রোল রুমে গিয়েও করোনা ইউনিটে ভর্তির ব্যবস্থা হয়নি। কোনোভাবেই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলাম না। অথচ ডাক্তাররা নাকি বলছে, শুরুতেই ভর্তি হতে। এখন আমি কী করব? আমার শরীর অনেক দুর্বল, মনে হচ্ছে এখনই পড়ে যাব।’  

এদিকে, হাসপাতালে করোনা টেস্টের জন্য নমুনা দিতে আসা মানুষও পড়েছেন বিপাকে। সিভিল সার্জন অফিসের পশ্চিম পাশে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের সম্মুখের খোলা চত্বরে করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করা হয়েছে। টেস্ট করাতে আসা রোগীদের অভিযোগ, প্রতিদিন শত শত মানুষ রোদে পুড়ে করোনার টেস্ট করতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ওখানে কোনো ছাউনিও নির্মাণ করা হয়নি। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়ছেন টেস্ট করতে আসা নানা বয়সের মানুষ। এমনকি করোনা পরীক্ষার ফরম সংগ্রহ করে সেটি পূরণ করার মতো টেবিল-চেয়ারও এখানে রাখা হয়নি। 

রোগীরা বলেন, করোনা পজিটিভ হলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দিলেও করোনার রিপোর্ট পাওয়া যায় একদিন পরে। রোগীদের কাছ থেকে টেস্টের জন্য দু’দফা স্যাম্পল নেওয়া হয়। একটি হাসপাতালে তাৎক্ষণিক জরুরি পরীক্ষা করা হয় আর অপর স্যাম্পলটি রিপোর্টের জন্য পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রংপুর থেকে রোগীদের মোবাইলে রিপোর্ট আসে একদিন পর। এদিকে করোনা পজিটিভ রোগীরা রিপোর্ট আসতে দেরির কারণে চিকিৎসা পরামর্শ পেতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েন।

দরিদ্ররা বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা করতে পারবেন- সরকারের এমন নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে। রোগীদের অভিযোগ, টেস্ট করতে আসা রোগীদের চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। চলতি মাসে সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষায় দরিদ্রদের জন্য ফি মওকুফ করলেও এই হাসপাতালে এখনো সবার কাছ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকারি সার্কুলার বুঝতে কিছুটা ভুল হয়েছে। এখন থেকে দরিদ্রদের করোনা পরীক্ষায় টাকা নেওয়া হবে না। পাশাপাশি রোগীদের বিড়ম্বনার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। কোনো রোগী যেন বিড়ম্বনার শিকার না হন, সবাই যাতে পর্যাপ্ত এবং ভালো সেবা পান আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’

তবে ভর্তির জন্য হাসপাতালের এ কক্ষ থেকে ওই কক্ষে পাঠিয়ে করোনা রোগীকে হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। করোনা রোগী ভর্তি হতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোগী ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি সঠিক নয়। এমন হয়ে থাকলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
 
রিপন আকন্দ/এইচকে/জেএস