সো‌মবার সকাল ৯টা ১০ মি‌নিট। এক‌টি অ্যাম্বু‌লেন্স থেকে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগী মাইনুদ্দিনকে নামানো হয় টাঙ্গাইল জেনা‌রেল হাসপাতা‌লের জরুরি বিভা‌গে। চিকিৎসকরা তাকে প্রাথমিকভাবে দেখে পাঠিয়ে দেন করোনা ইউনিটে। সেখানে দ্রুতই তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয় এবং চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যেই মারা যান মাইনুদ্দিন।  

স্বজনরা জানান, চার-পাঁচ দিন ধ‌রে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগ‌ছি‌লেন মাইনুদ্দিন। বা‌ড়ি‌তেই তা‌কে চি‌কিৎসা দেওয়া হ‌য়ে‌ছিল। হঠাৎ আজ সকা‌লে তার অবস্থার অবন‌তি হওয়ায় নেওয়া হয় হাসপাতা‌লে। কিন্তু তা‌কে আর বাঁচা‌তে পারলাম না। 

সোমবার সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, করোনা ইউনিটে বেডের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে কথা হয় শাকিল আনোয়া‌র না‌মে এক স্বজ‌নের সা‌থে। তিন দিন আগে শাকিল তার মাকে এখানে ভর্তি করিয়েছেন। তিনদিনেও বেড পাননি। বাধ্য হয়ে মে‌ঝে‌তেই চি‌কিৎসা নি‌তে হ‌চ্ছে। 

শাকিল বলেন, ভ‌র্তি করার প‌রদিন নমুনা দেওয়া হ‌য়ে‌ছে, কিন্তু এখ‌নো রি‌পোর্ট পাওয়া যায়নি। প্রতিদিন দুই হাজার টাকা মূল্যের একটি করে ইনজেকশন দিতে হচ্ছে। 

এই ইউনিটে চিকিৎসাধীন আরও কয়েকজন রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যা‌চ্ছে না। অক্সিজেনের সিলিন্ডারের জন্য টাকা দিতে হচ্ছে, নার্স ও আয়াদের টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। 

এদিকে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চি‌কিৎসা‌সেবা দি‌তে হিম‌শিম খা‌চ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। টাঙ্গাইল জেনা‌রেল হাসপাতাল সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, হাসপাতাল‌টির ক‌রোনা ইউনিট, ক‌রোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউ মিলে মোট ১১৬‌টি শয্যা র‌য়ে‌ছে। এর বিপরী‌তে হাসপাতা‌লে রোগী ভ‌র্তি র‌য়ে‌ছেন ১২৮ জন। 

ক‌রোনা আক্রান্তদের চি‌কিৎসার জন্য হাসাপাতালটিতে মিড লে‌ভে‌লের চিকিৎসক রয়েছেন ২০ জন,  বি‌শেষজ্ঞ চি‌কিৎসক র‌য়ে‌ছেন ১৫ জন,  নার্স র‌য়ে‌ছেন ৮০ জন। ক‌রোনা রোগী‌দের চি‌কিৎসা দি‌তে গি‌য়ে ইতোমধ্যে ২৫ জন নার্স ও চারজন চি‌কিৎসক ক‌রোনায় আক্রান্ত হ‌য়ে‌ছেন।

টাঙ্গাইল জেনা‌রেল হাসপাতা‌লের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সা‌দিকুর রহমান ব‌লেন, ক‌রোনার ধরন প‌রিবর্তন হ‌চ্ছে। এখন গ্রা‌মের মানুষ বে‌শি আস‌ছে ক‌রোনা উপসর্গ নি‌য়ে। ক‌রোনার বেড সংখ্যা কম থাকায় এবং রোগীর সংখ্যা বে‌ড়ে যাওয়ায় চি‌কিৎসা‌সেবা দি‌তে হিম‌শিম খে‌তে হ‌চ্ছে‌। হাসপাতা‌লে ক‌রোনা বে‌ডের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হ‌চ্ছে। সার্জারি ও অর্থপে‌ডিক ওয়া‌র্ডকে ক‌রোনা ওয়ার্ড করা হ‌বে। ওই দুইটি ওয়ার্ড শেখ হা‌সিনা মে‌ডি‌কেল হাসপাতা‌লের নতুন ভব‌নে স্থানান্তর করা হ‌বে।  

অভিজিৎ ঘোষ/এনএফ/জেএস