দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এর মধ্যে অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও কম নয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে কঠোর লকডাউন।

এ লকডাউনে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাটেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনার পাশাপাশি জ্বর, সর্দি, কাশি কিংবা অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখাতে সকলেই ভিড় জমাচ্ছেন হাসপাতালের বহির্বিভাগে। এ লকডাউনে প্রশাসনের সামনে স্বাস্থ্যবিধি মানলেও ডাক্তারের চেম্বারের সামনে তা মানছেন না কেউই।

সরেজমিনে সোমবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শুধু জয়পুরহাট জেলাই নয়, পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার বদলগাছী ও ধামইরহাট থেকে অনেকেই চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এতে বহির্বিভাগে বেড়ে গেছে রোগীর ভিড়। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেকেই মাস্ক পরছেন না। সামাজিক দূরত্বও দেখা যায়নি। আগে ডাক্তার দেখানোর জন্য লাইন ভাঙছেন অনেকে। 

বহির্বিভাগে আসা এক বৃদ্ধ ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছেন তিনি। তিনি শুধু বলতে পেরেছেন, জ্বর হয়েছে। পাশেই বসে ছিলেন একজন নারী। তিনিও একই রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন। 

চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পেটে তীব্র ব্যথা। শরীর খারাপ লাগছে। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এখানে আমার মতো অনেকেই এসেছেন।

রাবেয়া নামে এক মা তার শিশুকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। তিনি বলেন, গরুর জন্য রান্না করা গরম ভাতে হাত দিয়েছিল তার শিশু সন্তান। এতে শিশুটির ডান হাতের অর্ধেক অংশ পুড়ে যায়। সকাল ১০টা থেকে জন্য বসে আছেন তিনি। কিন্তু সাড়ে ১০টা বাজলেও ডাক্তার আসেননি।

দুর্ঘটনার শিকার জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার দাসরা আঁটিগ্রামের ১২ বছর বয়সী শিশু আতিকুল ইসলামও চিকিৎসা নিতে এখানে এসেছে। গত ঈদুল ফিতরের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় তার পা ভেঙে যায়। শিশুটির বাবা আব্দুল দুলাল বলেন, ঈদের দিন একটি মোটরসাইকেল ছেলের ডান পায়ের উপর দিয়ে যায়। এতে পা ভেঙে যায়। এর আগে এ হাসপাতালে এলে ডাক্তার ছেলের পা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলেন। আজ (সোমবার) আবার চিকিৎসককে দেখানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

জানতে চাইলে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভিড় করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলা হলেও তারা কোনো কথাই শুনছে না। তবুও তাদের বোঝানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেকের জ্বর, সর্দি, কাশিসহ একাধিক উপসর্গ থাকলেও একটি রোগের কথা বলে চিকিৎসা নিতে আসছেন। করোনার উপসর্গ বোঝা গেলে নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ৩৬ জন চিকিৎসক এবং ১১০ জন নার্স রয়েছেন। ক‌রোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের সময় ভাগ করে দেওয়া আছে। বর্তমানে ১৮ জন করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আরএইচ