হিমালয়ের পেছনে খরচ হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা

তিন বছর ধরে লালনপালন করছেন গরুটিকে। উচ্চতা ও ওজনের কারণে ভালোবেসে এর নাম রেখেছেন হিমালয়। প্রতিদিন খাবার বাবদ হিমালয়ের পেছনে খরচ হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। খামার ও হিমালয়কে লালনপালন করতে গিয়ে দেনা করেছেন প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। গত বছর কোরবানির ঈদে বিক্রি করতে পারেননি করোনার মহামারির কারণে। এবারও মহামারি বেড়েছে। কয়েক দিন পরেই কোরবানির ঈদ। এবারও ন্যায্যমূল্য পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত খামারি নাজমুল মোল্লা।

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কাকড়ী গ্রামের নাজমুল মোল্লার (২৫) বিশালাকৃতির গরুটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমায় স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার মানুষেরা। ১১ ফুট লম্বা আর ৬ ফুট উচ্চতার ফ্রিজিয়ান গরুটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি রয়েছে এর রাগ।

তরুণ নাজমুল মোল্লার খামারে তিনটি গাভি ও তিনটি বকনা রয়েছে। আর এই খামার ঘিরেই নাজমুলের সব স্বপ্ন। কিন্তু করোনার প্রভাব আর দেনার দায়ে সব স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে তার।

নাজমুল মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ছয় সদস্যের পরিবার এই খামারের আয়ের ওপর নির্ভর করে চলে। অনেক কষ্টে বড় করেছি হিমালয়কে। এর যত্ন নিতেই কেটে যায় আমার আর বাবার দিন-রাত। ভেবেছিলাম হিমালয়কে একটু ভালো দামে বিক্রি করব, পরিবারের দেনা শোধ করব। গত বছর কোরবানিতেও ষাঁড়টি বিক্রির জন্য চেষ্টা করেছি। হাটেও নিয়েছি। কিন্তু করোনার মধ্যে উপযুক্ত ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারিনি।

তিনি জানান, হিমালয়কে প্রতিদিন ঘাষ, কুটা, দেশীয় ফলমূলের পাশাপাশি দানাদার (খৈল, ভুট্টা, ছোলা, গমসহ নানা প্রকার বীজ) খাবার খাওয়াতে হয়। এসব খাবার কিনতে ধারদেনা করতে হয়েছে আমাকে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও শঙ্কায় রয়েছি, এমন আশঙ্কা করে নাজমুল বলেন, কী হবে জানি না। অনেক শখ ও ত্যাগ স্বীকার করে হিমালয়কে বড় করেছি। এত বড় গরু আশাপাশে কোথাও নেই। গত বছর ১০ লাখ টাকা চেয়েও বিক্রি করতে পারিনি। এবার খরচ বেড়েছে, তাই দাম চাচ্ছি ১২ লাখ টাকা। কিন্তু যদি ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পারি, তবে খরচ চালাতে আর মানুষের দেনা শোধ করতে আমাদের জমি বেচে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

নাজমুলের বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াস মোল্লা বলেন, হিমালয়ের পাশাপাশি আমাদের আরও চারটি গরু রয়েছে। এদের অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের মনে আজ আনন্দ নেই। ভালো দামে না বিক্রি করতে পারলে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। এদের লালনপালন করতে গিয়ে ছেলে মেলা টাকা দেনাও করেছে। কিন্তু ন্যায্যমূল্যে গরুটি বিক্রির জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

স্থানীয়, দ্বীপ, নারায়ণ, দীপংকরসহ কয়েকজন বলেন, গরুটি বড় করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে নাজমুল আর তার পরিবারের সদস্যদের। প্রতিদিন মানুষ আসে এই গরু দেখতে। কিন্তু গরু কেনার লোক তেমন আসে না। কোরবানিও প্রায় চলে আসছে। গত বছর ভালো দাম পাননি বলে বিক্রি করতে পারেনি। আমরা সবাই চাই নাজমুল যেন এ বছর তার গরুটিকে বিক্রি করতে পারেন।

গাওলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ সাধারণত ক্ষেতখামার আর খামারের ওপর নির্ভর করেই জীবন নির্বাহ করে। অনেকেই গরু পালন করে। কিন্তু দুই বছর ধরে করোনার কারণে খামারিরা গরুতে ভালো দাম পাচ্ছেন না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ খামারিরা। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করি বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের জেলায় দিন দিন খামারিদের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ষাঁড়কে দেশীয় খাবারের পাশাপাশি দানাদার খাবার খাওয়াতে হয়। বাগেরহাটে বড় ষাঁড়গুলো স্থানীয় বাজারে খুব একটা বিক্রি হয় না। তাই আমরা চলমান করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি।

তানজীম আহমেদ/এনএ