বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। শুক্রবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকেই জেলার একাধিক হাটে দেশি-বিদেশি নানা জাতের গরুর পাশাপাশি ছাগল ও মহিষ বিক্রি চলছে। তবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মানছেন না ক্রেতা বিক্রেতাসহ দর্শনার্থীরা।

জরিমানার পরেও পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, গরুর হাটে আবার স্বাস্থ্যবিধি কীসের। মাস্ক মুখে দিয়ে গরু কেনাবেঁচা যায় না।

এর আগে ১৫ জুলাই জেলার ২০টি স্থায়ী গরুর হাট চালু করার অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। অনুমতি প্রদানের পর থেকেই হাটগুলোতে গরু ওঠানো শুরু করেছে বিক্রেতারা। হাটগুলোর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলা, কচুয়া, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, শরণখোলা য় দুটি করে হাট রয়েছে।

এছাড়া মোরেলগঞ্জে ৬টি এবং রামপাল ও মোংলায় একটি করে স্থায়ী হাটে গরু ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এর বাইরেও স্থানীয় ছোট ছোট হাটে পশু উঠিয়েছেন খামারিরা।

শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাট জেলার সব থেকে বড় পশুর হাট ফকিহাটের বেতাগায় প্রচুর গরু ও মানুষের ভিড় দেখা যায়। বড় বড় গরুর পাশাপাশি ছাগল, মহিষও ছিল হাটে। কেউ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসছেন গরু। কেউ এসেছেন দাম যাচাই করতে আবার কেউ এসেছেন গরু দেখতে।

বড় গরু দেখলেই ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন ও ইজারাদারের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। পশু ক্রয়-বিক্রয়ের পরে পাম পারমিট গ্রহণের ঘরেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।

তিন গরু নিয়ে মাস্ক ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছেন হালিম নামের এক ব্যবসায়ী। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে বলেন, মাস্ক আছে পকেটে। দুই কিশোরসহ গরু ক্রয় করতে এসেছেন মুজিবুর রহমান নামের এক বৃদ্ধ। বৃদ্ধের মুখে মাস্ক থাকলেও, কিশোরদের মুখে মাস্ক নেই।

মাস্ক না থাকার কারণ হিসেবে মুজিবুর রহমান বলেন, বছরে একবারই কোরবানি আসে। এই সময় এত নিয়মকানুন দিলে হয় না। বাচ্চারা একটু আনন্দ করবে, সেই সময়ে এত আইন ভালো লাগে না। তবে মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার বিষয়ে হাটের ইজারাদার এবং প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ছিল।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের পশুর হাটে দেখা যায়, স্থানীয় খামারিরা বিভিন্ন ধরনের গরু নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আসছেন। ছোট গরুর পরিমাণ-ই বেশি। তবে এখানেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই দেখা যায়নি। বেশিরভাগ মানুষের মুখে ছিলো না মাস্ক। যে যার মতো ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছেন।

ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম বলেন, ফকিরহাটে দুটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। দুটি হাটই আজ চালু হয়েছে।প্রতিটি হাটে আসা মানুষের জন্য বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। দুই ধরনের স্বেচ্ছাসেবকরা হাতধোয়া ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিতে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, এরপরেও কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কিছু মানুষকে জরিমানাও করেছি। সর্বোপরি মানুষ সচেতন না হলে, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা কঠিন বিষয়। গরুর হাটে ঘোরাঘুরি, বাইরে চা-নাস্তা খাওয়া এসব ত্যাগ করে করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছি। তারপরেও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে বলেও জানান তিনি।

তানজীম আহমেদ/এমএসআর