পারিবারিক কলহের জের ধরে দাদির করা মামলায় মা কারাগারে। বেসরকারি চাকরিজীবী বাবার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা। অনন্যোপায় হয়ে দুগ্ধপোষ্য শিশু ভাইকে সঙ্গে নিয়ে মায়ের মুক্তি চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি করেছে অসহায় শিশু আলিফ (১২)।

শনিবার (১৭ জুলাই) সকালে বরগুনা শহরের টাউনহল এলাকার অগ্নিঝরা একাত্তরের পাদদেশে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি করে। এ সময় আশপাশের মানুষ অবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাদের দেখে।

ভুক্তভোগী আলিফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার বাবার চাকরির সুবাদে তারা গাজীপুরে বসবাস কছিল। আলিফ সেখানকার একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করায় আলিফ ইংল্যান্ডে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। তার ভিসাও প্রস্তুত। কিন্তু করোনার কারণে যেতে দেরি হচ্ছে। এমন সময় তার দাদির করা মামলায় কারাগারে রয়েছেন তার মা আনিতা জামান।

আলিফ আরও জানায়, তার নানার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। বরগুনায় তার দাদার বাড়ির স্বজন ছাড়া আর কোনো স্বজন নেই। তার ফুফুদের যোগসাজশে তার দাদি তার মা-বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। সেই মামলায় গত ১৫ জুলাই তার মাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সে আরও জানায়, তার বর্তমান বয়স ১২ বছর। অথচ তার বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে। এদিকে দুই বছর বয়সী দুগ্ধপোষ্য ভাই গালিফকে নিয়ে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিথ্যা মামলা থেকে মায়ের মুক্তির দাবি জানিয়েছে আলিফ।

বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকে জানা যায়, করোণাকালীন দুই-তিন মাস ধরে শিশু আলিফ ও গালিফকে নিয়ে মা আনিতা জামান বরগুনায় তাদের গ্রামের বাড়িতে থাকছেন। জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আলিফ ও গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও তার মা-বোনদের মাঝে কলহ চলছে। মামলায় আলিফের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ দাদিকে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে।

ওদিকে মো. মনিরুজ্জামান গাজীপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মামলায় ঘটনার যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় তিনি ছিলেন তার কর্মস্থলে। সেখানে ডিজিটাল হাজিরায় তার হাজিরা রয়েছে। কিন্তু এ তথ্য দিয়ে মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। তার নামে এখন ওয়ারেন্ট হয়েছে।

মামলা বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগী দুই শিশু আলিফ ও গালিফের চাচা ও ফুফুদের ভেতরকার পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এ মামলা করা হয়েছে। এতে অসহায়ত্বের শিকার হয়েছে ছোট দুই শিশু। দুগ্ধপোষ্য শিশু ও করোনাকালীন একজন নারীর অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলাম। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। আগামীকাল আবারও আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করা হবে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিসকাত সাজ্জাদ জানান, দুই-তিন মাস ধরে শিশু আলিফ ও গালিফের বাবা-মা বরগুনায় থাকছেন। জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আলিফ ও গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও তার মা-বোনদের মাঝে কলহ চলছে। আলিফের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ মাকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এনএ