দুপুরে গরম ভাত আর গরুর মাংস দিয়ে পরিবারের সবাই মিলে ঈদ উদযাপনের কথা। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না। আগুনে মূহুর্তেই সব শেষ হয়ে গেছে দরিদ্র পরিবারটির। বুক ফাটা আর্তনাদ আর চোখের পানি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই তাদের।   

বুধবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া পূর্বপাড়ায় দিনমজুর শেখ শওকতের বাড়িতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে তার টিনশেড বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি এখন নিঃস্ব। আগুন শুধু তার ঘরই পোড়ায়নি কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি ও জমানো আড়াই লাখ টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন স্থানীয়রা। কিন্তু এর আগেই আসবাবপত্রসহ পুরো ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে এই সময় বাড়িতে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী নাহিদ আকুঞ্জী বলেন, হঠাৎ শওকত ভাইয়ের টিনশেড কাঠের ঘরটিতে আগুন জ্বলতে দেখি। পাশের পুকুর থেকে বালতি ভরে পানি এনে আশপাশের লোকজন ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু এর আগেই পুরো ঘর পুড়ে যায়। 

আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণ করা মো রেজাউল হাওলাদার বলেন, পাশের বাড়িতে কোরবানির গরুর গোস্ত কাটছিলাম। আগুন দেখে সবাই ছুটে আসি। অনেক চেষ্টা করেছি নেভানোর। ফায়ার সার্ভিসের লোকেরাও এসে পানি দিয়েছে। কিন্তু পারলাম না। 

ভুক্তভোগী শেখ শওকত বলেন, সারাদিন কাজ করে রাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘরটিতে বিশ্রাম নিতাম। কিন্তু আগুনে আমার ঘরটির সঙ্গে কপালও পুড়েছে। আমি একবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। নতুন করে  একটি ঘর নির্মাণ করা আমার জন্য দুঃস্বপ্ন। এখন আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় যাব?

পুড়ে যাওয়া ভিটায় বসে ভবিষ্যৎ শঙ্কায় কাঁদতে থাকা শেখ শওকতের স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, আমার স্বামী, সন্তানেরা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই ঘর বানাইছে। আমাদের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছু নেই। গরু বিক্রির টাকাগুলোও পুড়ে শেষ। ব্যাংকে রাখার সুযোগ পাইনি। এখন আমি কই যাবো? কী খাব?

শওকত আলীর বড় ছেলে শেখ বেলাল বলেন, ছোটবেলা থেকে কষ্ট করে অল্প কিছু সম্পদ গুছিয়েছিলাম। যখন আগুন লাগে আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। পরে খবর পেয়ে এসে দেখি আমাদের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।  

স্থানীয় আমিনুল ইসলাম বলেন, পরিবারটি নিতান্তই গরিব। ঈদের এই খুশির দিনে তাদের সব শেষ হয়ে গেল। এই অবস্থায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাই। 

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ার বলেন, আমরা খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। চুলার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নগদ প্রায় তিন লাখ টাকা পুড়ে গেছে। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণে কাজ চলছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিনে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমি তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী পরিবারকে ইতোমধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুই-একদিনের মধ্যে তাদের সরকারি সাহায্য দেওয়া হবে। 

তানজীম আহমেদ/আরএআর