বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম এবারের কোরবানির গরু কিনেছেন আড়াই লাখ টাকা ও খাসি কিনেছেন ৩০ হাজার টাকায়। সেই গরুর চামড়া ৭০০ টাকা ও খাসির চামড়া ৩০ টাকায় বিক্রি করলেন। বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা এভাবেই কিনে নিচ্ছেন পশুর চামড়া।

এবার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই লাভের মুখ দেখতে পারেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। করোনার ধাক্কায় এবার কোরবানি কম হয়েছে বলেও জানা গেছে।

পবিত্র ঈদুল আজহায় উপলক্ষে বগুড়া শহরের থানামোড় থেকে শুরু করে ১নং রেলঘুন্টি ও বাদুরতলা চকযাদু সড়ক হয়ে চামড়া গুদাম পর্যন্ত হয় চামড়া বেচাকেনা। এদিন দুপুর ১২টার পর থেকে শুরু হয় বেচাকেনা।

বগুড়ার চামড়া ব্যবসায় সমিতির ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী এবার চামড়া মিলবে না। অপরদিকে ঈদুল আজহায় দেখা যায় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের। তবে এবার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই কমবেশি লোকসানের মুখ দেখে ফেলেছেন।

সরেজমিনে বুধবার বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা অব্দি বগুড়ার চামড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চামড়া ব্যবসায়ীরা বসে আছেন, চামড়ার আমদানি কম, দামও কম। গরুর চামড়া ব্যবসায়ীরা কিনছেন সর্বনিম্ন ৩০০ টাকায়, সর্বোচ্চ ৮৫০, খাসির চামড়া সর্বনিম্ন ১০ টাকা, সর্বোচ্চ ৩০।

চামড়া ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন মিঠু জানান, এবার ঢাকাসহ বিভিন্ন ট্যানারি কারখানাগুলো চামড়ার চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজারের মতো। কিন্তু ৩ হাজারের মতো চামড়া কেনা যাবে হয়তো। আগেরবার আমদানি বেশি ছিল। এবার কম। গতবারের তুলনায় এবার দাম বেশি রয়েছে। তবু চামড়া চাহিদামতো পাওয়া যাবে না।

এই ব্যবসায়ী গড়ে গরুর চামড়া কিনেছেন ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছে যে পাওনা আছে, তার মাত্র ৫০ শতংশ টাকা পাঠিয়েছে।

আরেক ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জানান, ঢাকায় ক্রিসেন্ট ট্যানারির কাছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বাকি পড়ে আছে ৪ বছর ধরে, ১০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। ব্যবসা মন্দার অজুহাতে টাকার জন্য ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। তার তিনি জানান, আকারভেদে গরুর চামড়া গড়ে নিম্ন ৩০০ টাকা, ঊর্ধ্বে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।

আচামড়া বাজারে কথা হয় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী শহরের নুরানী মোর এলাকার ছোটন হোসেন রুবেলের সঙ্গে। তিনি জানান, গত বছর গরুর চামড়া কিনে ৬ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবার আর তা হয়নি। ২৯টি চামড়া কিনে ৩ হাজার ৪০০ টাকা লাভ করেছেন। গতবার গরুপ্রতি কেনায় ক্ষতি হয়েছিল। এবার গড়ে কিনেছেন, তাই লাভ হয়েছে।

জেলার শিবগঞ্জ এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী রোস্তম আলী ও সোহরাব আকন্দ।  তারা উপজেলার আলীয়ার হাট ও গাড়িদহ থেকে চামড়া কিনেছেন। সব খরচ মিলিয়ে তারা এবার লোকসানের মুখে।  চামড়া ৪৩টি কিনেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে এসে কেউ ২১ হাজার ৫০০ টাকার বেশি বলছে না। শেষে বিপাকে পড়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে ২২ হাজার টাকায় বেচলেন। এমন অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে মূলধনও তুলতে পারেনি।

বগুড়া জেলা সাধারণ চামড়া ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার জানান, বগুড়ায় চামড়া ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ২৫ কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে। অথচ ট্যানারি মালিকরা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না। ট্যানারি মালিকরা টাকা না দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছে।

চামড়ার দাম কমের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি চামড়া কেনার পর তা প্রসেসিং করতে অনেক খরচ হয়। আর ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া গেলে টাকা পড়ে থাকে। অপরদিকে করোনার অজুহাতে এ ব্যবসার অবস্থা খুব ভালো না বলেও জানান তিনি।

সাখাওয়াত হোসেন জনি/এনএ